কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

জঙ্গি সংগঠনগুলোর নতুন তৎপরতা

গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারি দরকার

তিন বছর আগে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলার পর জঙ্গিদের সশস্ত্র তৎপরতা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগের যে প্রত্যাশা ছিল, তা অনেকাংশে পূরণ হয়নি। সেই ভয়াবহ বোমা হামলার পর সারা দেশে যে ১৬৯টি মামলা দায়ের করা হয়, তার মধ্যে মাত্র ৩৭টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। বাকি ১৩২টি মামলার অধিকাংশই বিচারাধীন; কিছু মামলার তদন্ত শেষই হয়নি। তিক্ত বাস্তবতা হলো, পাঁচটি মামলার রায়ে অভিযুক্ত সব আসামি খালাস পেয়েছে। যেখানে সরকার থেকে শুরু করে দেশের সব মানুষ একবাক্যে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে একজোট, সেখানে তিন বছরেও অধিকাংশ মামলার নিষ্কপত্তি না হওয়া, মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া, অভিযুক্তদের অনেকের বেকসুর খালাস প্রভৃতি ঘটনা প্রমাণ করে যে এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগে ঘাটতি রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রের খবরে জানা গেছে, জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ ছয় জঙ্গিনেতার ফাঁসির পর বোমা হামলাসংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচার-প্রক্রিয়ায় শিথিলতা এসেছে। এটা কাম্য নয়। জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে শিথিলতার কোনো সুযোগ নেই। এসব ক্ষেত্রে নির্লিপ্ত মনোভাব মানে জঙ্গিবাদীদের উৎসাহিত করা। বাস্তবে তা-ই হয়েছে। এরই মধ্যে জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার খবর আসছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর একজন জঙ্গিনেতার বক্তব্যে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। জানা গেছে, জেএমবি নতুন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তারা কয়েকটি বৈঠক করেছে।
এখন থেকে সরকারপক্ষকে সতর্ক হতে হবে। মামলার তদন্তে যেন কোনো ফাঁক না থাকে তা নিশ্চিত করা দরকার। দেখা গেছে, একজনকে একাধিক মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী করা হয়। এতে মামলা দুর্বল হয়ে যায়, আসামির সাজা নিশ্চিত করা যায় না। এসব ব্যাপারে সরকারের নিস্পৃহ থাকার কোনো উপায় নেই। মামলার দ্রুত নিষ্কপত্তিতেও সরকারপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। অনেক সময় সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। অথচ বেশির ভাগ মামলায় সাক্ষী হচ্ছেন পুলিশ বা সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা যদি মামলায় হাজির না থাকেন তাহলে চলবে কেন? কারাগারে আটক আসামিকে সময়মতো আদালতে হাজির না করানোর কারণেও অনেক মামলায় বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এদিকে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। অন্যদিকে আটক অভিযুক্তরা কারাগারের ভেতর থেকে বাইরের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কারাগারের ভেতর অভিযুক্ত জঙ্গিদের আলাদা সেলে রাখা ও তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা একান্ত দরকার। কারাগারের ভেতর যেন তারা অন্যদের জঙ্গি-প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করতে না পারে, সে জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

জঙ্গিরা যেন নতুনভাবে সংগঠিত হতে না পারে সে জন্য একদিকে যেমন গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে, অন্যদিকে তেমনি তারা যেন নিরীহ তরুণদের ধর্মের নামে উগ্রতার দিকে নিয়ে যেতে না পারে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে এ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নিতে হবে। এ জন্য উদার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন প্রকৃত ধর্মীয় নেতাদের ব্যাপক প্রচার একটি অন্যতম উপায়। গণতান্ত্রিক, দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজের সোচ্চার ভুমিকাও এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য। দেশে ধর্মীয়-সহিষ্ণুতা সমুন্নত রাখার জন্য সরকারকে এ ধরনের বহুমুখী উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রথম আলো, ১৮ আগস্ট ২০০৮

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia