কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েই যাব

আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েই যাব
লাঞ্ছিত সেই মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সমকালকে বললেন-
সমকাল প্রতিবেদক

মুক্তিযোদ্ধাদের নামধারী সংগঠন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সম্মেলনে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার চক্কাশী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহাম্মদ আলী আমান। তিনি জানান, সম্মেলনের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা তাকে টেনেহিঁচড়ে লাথি মেরেই শুধু ক্ষান্ত থাকেনি, প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রেখেছিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউট ভবনের একটি কক্ষে। ঘরবাড়ির ঠিকানাসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, সঙ্গে থাকা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে তারপর ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।

গতকাল সমকাল কার্যালয়ে বসে এক সাক্ষাৎকারে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বলেন, যত বিপদই আসুক আমি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েই যাব। তিনি মধ্য বাড্ডার বিজয় সরণি সড়কে থাকেন। ছেলের সঙ্গে ঘরবাড়ি রঙের কাজ করেন। এলাকার একজন পরিচিত মুক্তিযোদ্ধার আমন্ত্রণে তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স
ইনষ্টিটিউটে যান। কিন্তু সম্মেলন কক্ষের বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে দেখতে পান, সেখানে সেক্টর কমান্ডারদের কেউ নেই। এ অবস্থায় তিনি ভেতরে না গিয়ে বাইরের লনে বসেন। এরই মধ্যে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা কয়েকজন বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, যে মিটিংয়ে সেক্টর কমান্ডারদের বিচার চাওয়া হয়, সে মিটিংয়ে থাকব না।

এ সময় একুশে টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান, তিনি মুক্তিযোদ্ধা কি-না? উত্তরে তিনি জানান, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১১নং সেক্টরে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডি কোম্পানিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

এরপর ইটিভি জানতে চায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য আছে কি-না? উত্তরে তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা এ দেশের বিরোধিতা করেছিল, নারী ধর্ষণ করেছিল, অগ্নিসংযোগ করেছিল, বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছিল সেসব যু™ব্দাপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। তখন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা ছিল তারা জামায়াতে ইসলামী ও বর্তমানে পিডিপি করে।

তিনি বলেন, তাদের এখনই ফাঁসি দিতে হবে। বর্তমান নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই কেবল এ বিচার করতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর ভাষায়, ‘আমার বক্তব্য শেষ হতে দেরি, ধরতে দেরি নাই। উড়াল দিয়ে পাখির মতো ছোঁ মেরে আমাকে ভেতরে নিয়ে যায়। তারা যা করেছে, তা আমি আর বলতে চাই না। বললে এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান হবে।’

ভেতরে নিয়ে বর্ষীয়ান এই মুক্তিযোদ্ধাকে তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এ সময় ইটিভির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারের জন্য কৈফিয়ত চাওয়া হয় তার কাছে। পরে জনৈক জামায়াত নেতা সোলায়মান হোসেনের মধ্যস্ট’তায় তিনি মুক্ত হন। ছেড়ে দেওয়ার আগে ওই জামায়াত নেতা জানতে চান, ভবিষ্যতে তাকে মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ আমন্ত্রণ জানালে তিনি আসবেন কি-না। উত্তরে তিনি বলেন- ‘আসব, তবে আমি
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েই যাব। আমার ফাঁসি হলেও এ দাবি করেই যাব।’

জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনপুষ্ট এ ধরনের সংগঠনকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর ভেতরে অনেক যুদ্ধাপরাধী লুকিয়ে আছে। লুকায়িত যুদ্ধাপরাধীদের সম্মেলনে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, শাহ আজিজের মতো রাজাকার প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে সাবেক প্রধান বিচারপতি তাদের মিটিংয়ে আসতেই পারেন।

ইটিভির রিপোর্টার ও মুক্তিযোদ্ধাকে আটক সম্পর্কে
সম্মেলনে ইটিভির রিপোর্টার সাজেদ রোমেল ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে আটকের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংগঠনের মহাসচিব মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, বিষয়টি আমরা জানতামই না। ইটিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী আমাদের একজনকে জানান, আমাদের লোকেরা নাকি তার রিপোর্টারকে আটকে রেখেছে। বিষয়টি জেনে আমরা তাকে ফোন করে জানাই, আপনার রিপোর্টার স্বেচ্ছায় বসে আছেন। তিনি তার বন্ধুদের ছাড়া যেতে রাজি নন। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সম্মেলনে প্রতিনিধি সংখ্যা নির্ধারিত। প্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট কার্ড আছে এবং কারা সম্মেলনে এলেন তারও রেকর্ড আছে। কেউ ইচ্ছা করলেই সম্মেলনের ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে মোহাম্মদ আলী কারো ভাড়াটে হিসেবে সে কাজটিই করতে চেয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ যা বলছে
এদিকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ সমকালসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, কতিপয় লোক সম্মেলনের ডেলিগেট কার্ড ছাড়া জোর করে ঢুকতে গেলে স্বেছাসেবকরা কার্ড দেখতে চাইলে তারা অসংলগ্ন কথা বলে। এ সময় ইটিভি সে দৃশ্য ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়। তারা মূল অনুষ্ঠানের সংবাদ পরিবেশন না করে
কতিপয় ভাড়াটে লোক উদ্দেশ্যমূলক এ দৃশ্যের অবতারণা করে প্রতিনিধি সম্মেলনকে ভন্ডুল করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদের সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তারা দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন। এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা নেই।
---------
খবর: সমকাল ১৪ জুলাই

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia