নিবন্ধনের শর্তের সত্যতা যাচাই শুরুর পর চট্টগ্রামের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নতুন করে বাসাবাড়িতে কার্যালয় খুলছে। শুধু তাই নয়, টাঙানো হচ্ছে নতুন সাইনবোর্ডও। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ভিড় করছেন স্থানীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে। তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কখন কোন দলের কার্যালয় তদন্ত হবে, তা আগেভাগে বলা যাবে না।
গত বুধবার প্রথম আলোতে ‘চট্টগ্রামে ছাপাখানায় বিজেপি, ওষুধের দোকানে এনপিপির কার্যালয়!’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিবন্ধন পাওয়ার কৌশল হিসেবে বুধবার বিকেলেই একই হোল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় মমতাজ বেগমের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে ছবি তোলে জাতীয় পার্টি (মতিন) বিজেপির নেতা-কর্মীরা। বাসার বাইরে টাঙানো হয় নতুন করে লেখা সাইনবোর্ড। সরেজমিন অনুসন্ধানে বুধবারের আগে সেখানে বিজেপির কোনো সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে একই ঠিকানার চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার ড্রয়িংরুমে বসে টেলিভিশন দেখছেন মমতাজ বেগমের পরিবার। এটি বিজেপির কার্যালয় কি না, জানতে চাইলে মমতাজ বেগম বলেন, ‘এটি আমার ফ্যামিলি বাসা, কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নয়। তবে পরিচয়ের সুত্র ধরে বুধবার বিজেপির লোকজন এখানে বসে ছবি তুলেছেন।’ জাহাঙ্গীর সাহেব(নগর বিজেপির সভাপতি) মমতাজকে অনুরোধ করে বলেছেন, ‘সাংবাদিক এলে ড্রয়িংরুমটাকেই বলবেন বিজেপির কার্যালয়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও বিজেপির নেতা-কর্মীরা ওই বাসায় গেলে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আপনারা এখান থেকে চলে যান। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নেই, হবেও না।’ বাসার বাইরে টাঙানো সাইনবোর্ডও তিনি সরিয়ে ফেলেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে দলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ গতকাল বিকেলে ফোন করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি অবস্থার কারণে এখন ড্রয়িংরুমে আমাদের কাজ চালাতে হচ্ছে। আমরা ছোট দল, নিবন্ধনের আগে অন্তত আমাদের পক্ষে একটু লিখুন।’
তদন্তকারী কোতোয়ালি থানার নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘দু-এক দিনের জন্য বাসাবাড়িতে বসে দলের কার্যালয়ের অস্তিত্ব প্রমাণের সুযোগ নেই। সরেজমিনে যাচাই করে এই ঠিকানায় বিজেপির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন সুত্র জানায়, নিবন্ধনের শর্তের সত্যতা যাচাই শুরুর পর প্রতিদিনই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নগরের রহমতগঞ্জের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আসছে। তারা নিজেদের জেলা, উপজেলা কমিটির ঠিকানা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তারা এসব ঠিকানা আমলে নেননি।
বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার গতকাল বলেন, ‘ঢাকা (নির্বাচন কমিশন সচিবালয়) থেকে যেসব রাজনৈতিক দলের ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হচ্ছে, সেসব দলের কার্যালয় ও অস্তিত্ব খতিয়ে দেখছি আমরা। সংশ্লিষ্ট ঠিকানা অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও কমিটি আছে কি না, তা তদন্ত করা হবে। নতুন করে দেওয়া কোনো রাজনৈতিক দলের ঠিকানায় গিয়ে কার্যালয় যাচাই করা হবে না।’
নির্বাচন কমিশন সুত্র জানায়, প্রতিদিনের তদন্তে এখনো ভুয়া ঠিকানা বেরিয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে তদন্তকারী বন্দর থানার নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, ‘পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের বন্দর থানার ঠিকানায় দলের কোনো কার্যালয় পাওয়া যায়নি। ফোন-ফ্যাক্সের একটি দোকানকে এই দলের কার্যালয় করা হবে বলে দোকানি আমাকে জানিয়েছেন।’
একইভাবে তদন্তকারী নির্বাচন কর্মকর্তা মিরসরাই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) শেখ ফরিদ আহমেদ মান্দরবাড়িয়া গ্রাম, নয় নম্বর ইউনিয়ন, তিন নম্বর ওয়ার্ডে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মিরসরাই উপজেলা কার্যালয় খুঁজে পাননি বলে প্রতিবেদন দেন।
প্রথম আলো, ৩১ অক্টোবর, ২০০৮