কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিলেন আমিনী

সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিলেন আমিনী
হজ মিনারের দাবিতে মিছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষমতায় গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরসহ সারা দেশে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে নির্মিত সব মূর্তি (ভাস্কর্য) ভেঙে ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি ‘শিখা চিরন্তন’ ও ঢাকা সেনানিবাসে অবস্স্থিত ‘শিখা অনির্বাণ’ নিভিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি আমিনী বলেন, ‘যেগুলো স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইয়ে হিসেবে বানানো হইছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নাই।’

তাহলে শিখা অনির্বাণের ব্যাপারে আপত্তি কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘শিখা অনির্বাণ স্বাধীনতার কিছু হইতে পারে না। স্বাধীনতার সময় কি আগুন জ্বালানো হইছিল?’

চারদলীয় জোটের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা মুফতি আমিনী আরও বলেন, দেশ ও জাতির কঠিন দুঃসময়ে বর্তমান সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতি দমনসহ প্রাথমিক বেশ কিছু পদক্ষেপে দেশবাসীর অকুন্ঠ সমর্থন লাভ করেছিল। কিন্তু ২১ মাসের জরুরি অবস্থার মধ্যে এই সরকারের দেশ ও ইসলামবিরোধী কিছু পদক্ষেপ মারাত্মক উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ব্র্যাকের হাতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা তুলে দেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি প্রথম আলো ও সাপ্তাহিক ২০০০-কে ইসলামবিরোধী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সমালোচনা করেন।

মুফতি আমিনী বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির থিউরি হচ্ছে, আমরা সব ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্কে মনে করি। কাজেই এই দেশের ভবিষ্যৎ খুব অন্ধকার। একদিকে দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, আরেক দিকে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ হইতাছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আমিনী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এলে হাসিনা যেসব মূর্তি বানাইছে ইউনিভার্সিটিতে, এইগুলো ভাইঙ্গা চুরমার কইরা দিব। হাসিনা এই দেশটাকে মূর্তির দেশ বানাইতেছে। ইউনিভার্সিটি চত্বরে যে মূর্তিগুলো বানানো হইছে, এটা মারাত্মক ইসলামবিরোধী এবং ইসলামি শক্তি ক্ষমতায় এলে এ সমস্ত মূর্তি রাখতে পারে না।’

খালেদা জিয়ার আমলেও তো কিছু বানানো হয়েছে, সেগুলো কী করবেন−এ প্রশ্নের জবাবে আমিনী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কোথায় বানাইছে?’

একজন সাংবাদিক বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালে বানানো হয়েছে। আমিনীর জবাব, ‘ওইডা আমরা দেখি নাই। তার পরে আরেকটা জিনিস; আগুন পূজা হইতাছে, এইডারও আমরা বিরোধী। এই যে আগুন পূজা করে সেনাবাহিনীর দ্বারা, এইডারও আমরা বিরোধী। আমরা অনুরোধ করছি, আগুন পূজা আপনারা বন্ধ করুন। আগুনকে শ্রদ্ধা করা আর আগুন পূজা করা একই কথা।’ জোট সরকারের পাঁচ বছর এসব বলেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘তখন তো বলেছি, খালেদা জিয়াকে বলেছি তো ব্যক্তিগতভাবে। কিন্তু আমাদের কথায় কি কান দিছে? আমাদের তো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি বানানো হইছে। আমাদের কোনো কথায় কান দেওয়া হই নাই।’

বিমানবন্দর চত্বর থেকে লালন শাহের ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে মুফতি নুর হোসাইন নুরানীর নেতৃত্বে আন্দোলন সমর্থন করেন কি না−জানতে চাওয়া হলে মুফতি আমিনী বলেন, ‘নুরানী কে, আমরা ওনারে চিনি না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা শফিউদ্দিন, মাওলানা আবুল কাশেম, আহরুল্লাহ ওয়াছেল প্রমুখ।

হজ মিনারের দাবিতে মিছিল: বিমানবন্দর গোলচত্বরে একটি ‘হজ মিনার’ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন খতমে নবুওয়ত আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি নুর হোসাইন নুরানী। গতকাল উত্তরার ফায়দাবাদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে মিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আশা করি সরকার অচিরেই মসজিদের নগর ঢাকার মর্যাদা ও সৌন্দর্য বর্ধনে জিয়া বিমানবন্দর গোলচত্বরে একটি আধুনিক হজ মিনার নির্মাণ করবে। অন্যথায় যেকোনো ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা হজ মিনার নির্মাণে সরকারকে বাধ্য করেই ঘরে ফিরব।’

‘বিমানবন্দর গোলচত্বর মূর্তি প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে এ কর্মসুচি পালিত হয়। এতে বক্তব্যকালে মুফতি নুরানী বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও অপপ্রচার করে কোনো লাভ নেই। কারণ, আমরা বাঘের গর্জন শুনে অভ্যস্ত, বানরের ভেংচিতে ভয় পাই না।’

মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব ও জামেয়া বাবুস সালাম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান এবং খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের মহাসচিব আবদুল আলীম নিজামী। সমাবেশের পর একটি মিছিল এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মিছিলের সামনে পুলিশের একটি দলও ছিল।

প্রথম আলো, ১৮ অক্টোবর, ২০০৮

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia