কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

জামায়াতের গঠনতন্ত্র এখনো সংবিধান পরিপন্থী

জামায়াতের গঠনতন্ত্র এখনো সংবিধান পরিপন্থী
সহযোগী সংগঠন নিয়ে আ’লীগের মতো সমস্যা বিএনপিতেও
হারুন আল রশীদ

সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথা বলা হলেও জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র এখনো সংবিধান পরিপন্থীই রয়ে গেছে। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে জামায়াত সংশোধিত গঠনতন্ত্রের যে খসড়া নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছে, তাতে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব ধারাকে সংবিধানের উপযোগী করে তোলার জন্য জামায়াতকে অনুরোধ জানাবে ইসির গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা কমিটি।

সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্রও নিবন্ধন আইনের শর্তবিরোধী। আওয়ামী লীগের মতো তারাও গঠনন্ত্রে সহযোগী সংগঠন রাখার বিধান রেখেছে। গঠনতন্ত্রের এ বিধানটি সংশোধন করে দেওয়ার জন্য ইসির গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা কমিটি বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করবে। মঙ্গলবার ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিনে জামায়াত ও বিএনপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। গতকাল ইসির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ওইদিনই রাতের বেলায় গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা দুটি দলের গঠনতন্ত্রের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পড়ে দেখেন। এ থেকে তাদের মনে হয়েছে, জামায়াত ও বিএনপি নিবন্ধন আইনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

গণপ্রতিনিধিন্ত্র আদেশের ৯০-সি (১/এ) ধারায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তে বলা হয়েছে, দলীয় গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্যসমহৃহ সংবিধানের পরিপন্থী হতে পারবে না।
৯০-সি (১/বি) ধারার বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও লিঙ্গ ভেদে কোনো বৈষম্য থাকতে পারবে না।
জামায়াত ইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে এ দুটি ধারাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ থেকে বাতিল করার দাবি জানায়। একই সঙ্গে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট আবেদনে তারা ৯০-সি (১/বি) ধারাটি বাতিলের দাবি জানায়।
জামায়াতের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ২ ধারার ৫ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। কেননা সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকারী আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারো আসলেই নেই।’

ইসির পর্যালোচনা কমিটির মতে, এ ধারার মাধ্যমে জনগণের রায়ে নির্বাচিত সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
গঠনতন্ত্রের ৫ ধারার ৩ উপধারায় জামায়াতের দাওয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটানোর আহ্বান।’

ইসির পর্যালোচনা কমিটির মতে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশ গণতান্ত্রিক রীতিতে পরিচালিত হবে। এখানে ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসনব্যবস্থা কায়েমের কোনো সুযোগ নেই।
এছাড়াও গঠনতন্ত্রের ৩ ধারার ১ উপ-ধারায় জামায়াতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবন ও জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃঙ্খলা হইতে রক্ষা করিবার প্রচেষ্টা চালানো।’

এ ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘সার্বভৌম শব্দটি ভৌগোলিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ইসলামে আইনগত সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।’
৬ ধারার ৪ উপ-ধারায় জামায়াতের কর্মসূচি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠাকল্পে গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বাঞ্ছিত সংশোধন আনয়নের উদ্দেশ্যে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে সৎ ও খোদাভীরু নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা।’

পর্যালোচনা কমিটির মতে, এ দুটি ধারাও বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী।
সূত্র জানিয়েছে, এ ধারাগুলো ছাড়াও জামায়াতের গঠনতন্ত্রে আরো একাধিক ধারা রয়েছে, যা নিবন্ধন আইনের বিভিন্ন শর্তের পরিপন্থী।

জামায়াত ছাড়াও বিএনপি সংশোধিত গঠনতন্ত্রও নিবন্ধনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০-বি/বি/৩ ধারা মোতাবেক ছাত্র, শিক্ষক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক দলের কোনো ধরনের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না করার বিধান দলের গঠনতন্ত্রে থাকতে হবে। কিন্তু বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিকদের নিয়ে কোনো অঙ্গসংগঠন থাকবে না। তবে ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশাজীবী, যারা বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী, তারা নিজ নিজ গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়ে সংগঠন করতে পারবে। এসব সংগঠন বিএনপির সহযোগী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইসির পর্যালোচনা কমিটির মতে, এ ধারা নিবন্ধন শর্তের পরিপন্থী। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে বলে ইসি সহৃত্র জানিয়েছে। একই কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির পর্যালোচনা কমিটি আজ আরেকদফা বসতে পারে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূলকপিও আজ ইসির কাছে জমা দেওয়া হবে।
সমকাল, ২২ অক্টোবর, ২০০৮

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia