কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

সরকারের সঙ্গে পলাতক আসামি মুজাহিদের বৈঠক, নানা প্রশ্ন

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করলেন পলাতক আসামি জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ ও চার উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে জামায়াতের প্রতিনিধিদলে তিনিও ছিলেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলায় জনাব মুজাহিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পুলিশ তাঁকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। এর পরও তিনি কীভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংলাপ শেষে যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের চার উপদেষ্টার সঙ্গে মুজাহিদও যোগ দেন। ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, একটির বেশি প্রশ্ন করা যাবে না। তার পরও সাংবাদিকেরা জোরাজুরি করে আরেকটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি হলো, পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, জনাব মুজাহিদ পলাতক, তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তিনি সরকারের সঙ্গে সংলাপ করলেন, এখন কোনটা সঠিক? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান মাইক ঠেলে দেন জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর দিকে। জনাব নিজামী মাইক ঠেলে দেন মুজাহিদের দিকে। জনাব মুজাহিদ বলেন, এ প্রশ্নের জবাব দেবেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। জনাব রাজ্জাক বলেন, এ দেশের অনেক রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা আছে। জনাব মুজাহিদ এই মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছিলেন, সেটির নিষ্পত্তি হয়নি। তবে আদালত ১৬ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। তাই মুজাহিদের আজকের সংলাপে যোগ দেওয়াটা বেআইনি হয়নি।
এ পর্যায়ে সাংবাদিকেরা সরকারের বক্তব্য জানতে বারবার প্রশ্ন করলেও কোনো জবাব না দিয়ে চার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, হোসেন জিল্লুর রহমান, আনোয়ারুল ইকবাল ও গোলাম কাদের তড়িঘড়ি করে উঠে চলে যান।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলায় জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত গত ৬ অক্টোবর জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ১২ অক্টোবর পুলিশ সাইফুর রহমান ছাড়া অপর আটজনকে পলাতক উল্লেখ করে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল বিষয়ে উত্তরা থানা পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, "গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছে। পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় নাই।"
১২ অক্টোবর বিকেলে যখন পুলিশ এই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়, ওই সময় জামায়াতের নেতা জনাব মুজাহিদ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে চলা চারদলীয় জোটের সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
পুলিশের ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১৬ অক্টোবরের মধ্যে আলোচ্য আসামিদের আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন।
আদালতের এরূপ নির্দেশ দেওয়ার পর জনাব মুজাহিদ ছাড়া অন্যদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
দন্ডবিধির ২২০, ২২১ ও ২২২ ধারা মোতাবেক আদালতের এরূপ নির্দেশ উপেক্ষা করা হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী সাত বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
গতকাল এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক নুর মোহাম্মদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম স্পষ্টত প্রমাণ করে, সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার কাছে আইন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নতজানু হয়ে পড়েছে। এ মামলার আসামিরা কে কোথায় আছেন, কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, সেসব অনুষ্ঠানের আয়োজনকারীসহ সবার কাছেই তা জানা। তিনি বলেন, একদিকে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করছেন, অন্যদিকে ঘটনাপ্রবাহে মনে হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে গ্রেপ্তার না করার জন্য। অর্থাৎ এ সরকারও আগের সরকারের মতো আইন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়, জনাব মুজাহিদকে সংলাপে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি। মুজাহিদকে ছাড়া জামায়াত সংলাপে যোগ দিতে রাজি হয়নি। তা ছাড়া বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় সরকারের পক্ষ থেকে জনাব মুজাহিদকে দুতিয়ালির কাজে লাগানোয় এ ক্ষেত্রে জামায়াত সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি উচ্চপর্যায়ের সুত্র বলছে।
জামায়াতের বক্তব্য: জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনাব মুজাহিদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মতামত পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজের আদালত থেকে আলী আহসান মুজাহিদকে আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া তাঁর জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। তাঁর বিষয়টি বিচারাধীন আছে। এমতাবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা সমীচীন নয়। দেশের একজন নাগরিক ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তিনি সরকারের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর ও সরকারের জন্য আইনগত কোনো বাধা নেই।
এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্যারিস্টার রাজ্জাক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা উল্লেখ না করলেও গত ১৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামসহ অন্যান্য জাতীয় দৈনিকে পরোয়ানা জারির খবর ঠিকই ছাপা হয়েছে।

প্রথম আলো, ১৫ অক্টোবর, ২০০৮

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia