কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

‘পলাতক’ মুজাহিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক!

পলাতক আসামি জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার সরকার ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আলী আহসান মুজাহিদও উপস্থিত ছিলেন।
একজন পলাতক আসামি কীভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাব প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্টি’ত উপদেষ্টাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে আলী আহসান মুজাহিদের আইনজীবী ও জামায়াত নেতা ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক একটি বিভ্রান্তিকর জবাব দেন।

সংলাপে দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবদুল কাদের মোল্লা, ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জসিমউদ্দিন, আবদুস সুবহান, রফিকউল ইসলাম খান, মকবুল আহমেদ, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও এটিএম আজাহারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সরকারের পক্ষে শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, যোগাযোগ উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের, আইন উপদেষ্টা হাসান আরিফ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনার বিচারসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিসহ সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের কতিপয় ধারা সংশোধন, আগের সীমানা অনুযায়ী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা এবং মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ৩১ মে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিকেলে প্রায় দুই ঘণ্টা দীর্ঘ সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতেই মাগরিবের নামাজের সময়ের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনাকালে আমরা নির্বাচনের আগে জরুরি আইন প্রত্যাহারসহ উপজেলা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলেছি। সেইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ জেলে আটক জোট নেতাদের মুক্তি এবং তাদের ওপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জামায়াতের সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা দেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের কাছে বেশ ক’টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। এর মধ্যে নির্বাচনের আগে জরুরি আইন প্রত্যাহার, উপজেলা নির্বাচনের তারিখ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া। এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথাও তুলে ধরা হয়।

তিনি বলেন, সরকার দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে যে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে সরকার পিছপা হবে না। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের কাছ থেকে সে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে আরো আলোচনা হবে।

জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী মাগরিবের নামাজের কথা বলে তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করেন। একইভাবে শিক্ষা উপদেষ্টা তার বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে মাত্র একটি প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা দেন। এ সময় সাংবাদিকরা সমস্বরে প্রতিবাদ জানান। জরুরি আইন প্রত্যাহারের সুনির্দিষ্ট কোনো দিন ঘোষণা করা হয়েছে কি-না। এ প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে জরুরি আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি সরকার পর্যালোচনা করছে।

এরপর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল পলাতক আসামি, তিনি কী করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংলাপে অংশ নিলেন- এ প্রশ্ন করা হলে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী দলের সেক্রেটারি জেনারেল এবং পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবী ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাককে দেখিয়ে দিয়ে তাকে প্রশ্নের জবাব দিতে বলেন।

ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে তার স্বপক্ষে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন আছে, যা আগামী ১৬ অক্টোবর শুনানি হবে। যেহেতু বিষয়টি উচ্চ আদালতের বিবেচনাধীন আছে সেহেতু তার পক্ষে সংলাপে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। তিনি মুক্ত মানুষ এবং জামায়াতের সেত্রেক্রটারি জেনারেল হিসেবেই সংলাপে অংশ নিয়েছেন।

আবদুর রাজ্জাকের এ জবাবের পর সরকারি ভাষ্য জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং আইন উপদেষ্টা হাসান আরিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা পলাতক আসামি আলী আহসান মুজাহিদকে নিয়ে দ্রুত ব্রিফিং কক্ষ ত্যাগ করেন।

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia