কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেননি : হাসিনা জানতেন

খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেননি : হাসিনা জানতেন ১২ জানুয়ারির মধ্যে মার্শাল ল’ হবে

এনার পক্ষ থেকে মিজানুর রহমান

সাবেক উপদেষ্টা মোখলেস চৌধুরী

মোখলেসুর রহমান চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সাবেক উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক। বাংলাদেশের বৈদেশিক সাংবাদিক সংস্খা ওকাব-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব চৌধুরী ১/১১-এর জ্বলìত সাক্ষী। যে ক’জন মানুষ ১/১১’র ঘটনা ঘটার সময় উপস্খিত ছিলেন তার মধ্যে মোখলেস চৌধুরী অন্যতম। তিনি সব কিছু খুব কাছে থেকে দেখেছেন। ১/১১ কার ইঙ্গিতে হয়েছে, কীভাবে হয়েছে সব কিছুই নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি নিশ্চিতভাবে ১/১১’র ইতিহাসের একটি অংশ। বঙ্গভবন থেকে বের হবার পর তিনি এই প্রথম বারের মত কোন মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন। তিনি সম্প্রতি আমেরিকায় বেড়াতে এসেছিলেন। আমেরিকায় অবস্খানকালে ঠিকানাকে দেয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকালে অনেক চালঞ্চল্যকর, শিহরণ জাগানো কথা বলেছেন। বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১/১১ এর ঘটনার কথা বিশ্বাস করতে চাননি, আর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা জানতেন ১২ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে মার্শাল ল’ জারি করা হচ্ছে। এই সাক্ষাতকারে জনাব চৌধুরী পুঙ্খানুপুঙ্খ ১/১১ এর সমþত ঘটনা তুলেছেন যা পাঠকদের দীর্ঘদিনের সুপ্ত কৌতুহল মেটাবে। এখানে সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য প্রশ্নোত্তরাকারে তুলে ধরা হলো-

ঠিকানা: আপনি কবে এবং কী কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন?

মোখলেস: যুক্তরাজ্য সফর শেষে এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছি। আতীয়- স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে।



ঠিকানা: ব্যক্তিগত সফরে এলেও দেখা গেছে আপনি কংগ্রেসম্যানসহ অন্যান্য কর্মকতাদের সাথে বৈঠক করেছেন, দেখা করেছেন, বিষয়টি কি বলবেন?

মোখলেস: কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলিসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউজ এবং জাতিসংঘের অনেক কর্মকর্তার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। কাজের কারণে অনেকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং সেই সুবাদে তাদের সাথে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা যখন ঢাকায় গিয়েছিলেন তখন বঙ্গভবনেও তাদের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছিলো।



ঠিকানা: ক্রাউলি ছাড়া আর কার কার সাথে বৈঠক হয়েছে?

মোখলেস: ক্রাউলি ছাড়া আর যাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তারা অফিসিয়াল। তারা জনপ্রতিনিধি নন। বাংলাদেশ আমাদের দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদেরকেই ভূমিকা রাখতে হবে সম্মিলিতভাবে, জাতিকে বিভক্ত করে নয়। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তা আমাদেরকে দেশে- বিদেশে তুলে ধরতে হবে। যে জাতি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে আতপ্রকাশ করেছে, সে জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ভাল দিক আছে, যেগুলো প্রবাসী বাংলাদেশীরা গ্রহণ করবেন। আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে হিংসা- বিদ্বেষ, ঘৃণা, তুলনা, হায়- আপসোস ইত্যাদি বিরাট সমস্যা। অনেক মানুষ অলস জীবন যাপন করে। আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের উন্নত জীবনের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন ঠিক সেইভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মানব সম্পদ। এই মানব সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। জাতির সামনে এবং নেতৃত্বের সামনে ভিশন এবং মিশন দুটোই থাকতে হবে। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তারা পরস্পর পরস্পরের শক্র নয়- এই মানসিকতা যতক্ষণ পর্যìত তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ পর্যìত জাতিকে অনেক খেসারত দিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জনগণ দুই ভাগে বিভক্ত। কিন্তু জাতি হিসাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ। রাজনীতি আমাদের করতে হবে। নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একটি দল ক্ষমতায় যাবে, আরেকটি দল অবস্খান নিবে বিরোধী দলে। যখন যারা ক্ষমতায় যাবেন তাদের মনে রাখতে হবে- সারা দেশের মানুষের দায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত- এই মানসিকতা যতক্ষণ পর্যìত প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ পর্যìত আমরা সংকীর্ণতা পরিহার করতে পারবো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে তাদের আপন আপন অবস্খানে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। জাতীয় নেতাদের নিয়ে আমাদের বিতর্কের অবসান ঘটাতে হবে। রাজনীতিই আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, এই রাজনীতিকে ধ্বংস করা যাবে না।

ঠিকানা: আপনি কি বিশ্বাস করেন, যে রাজনীতির উপর ভিত্তি করে দেশ স্বাধীন হলো, গণতন্ত্রিক আন্দোলন হলো সেই রাজনীতি এখন ধ্বংস হবার পথে? সেই আশংকা থেকে এই সব কথা বললেন?

মোখলেস: অনেকটা তাই। বর্তমানে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে রাজনীতি মহাসংকটে নিপতিত।

ঠিকানা: এর কারণটা কী এবং এই আংশকার সঙ্গে ১/১১ এর যে পরিবর্তন তার কোনো সম্পর্ক আছে?

মোখলেস: আমি ১/১১ নিয়ে এই মুহূর্তে কোন মìতব্য করবো না। দেশের বাইরে এ ব্যাপারে বিþতারিত বলা শোভন হবে না। তবে এটুকু বলা যায়- আমাদের সংবিধান আমাদেরকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্খা উপহার দিয়েছে। দুর্নীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পৃথিবীতে মানুষের আগমনের পর থেকে দুর্নীতি দেশে দেশে শেকড় গেড়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতেও বড় বড় দুর্নীতি রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফন্সান্স, জাপান ও রাশিয়ার মতো উন্নত দেশেও লবিং, বিভিন্ন ফান্ড রেইজিং ও নির্বাচনের নামে দুর্নীতি হয়ে থাকে। ওয়াটারগেইট ও বোফোর্স কেলেংকারীর মতো দুর্নীতি বাংলাদেশে হয়নি। সিলিকন ভ্যালিতে যে দুর্নীতি হয় কয়েকটি বাংলাদেশ মিলেও সে দুর্নীতি হয় না। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় রাজনীতি বা নির্বাচিত সরকারকে বলা হয় মাস্টার, আর সরকারি কর্মকর্তাদের বলা হয় সার্ভেন্ট। প্রত্যেকের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে, কেউ কারো সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়। বর্তমানে দেশে অগণতান্ত্রিক শাসন চলছে- যে ব্যবস্খা আমাদের সংবিধানে নেই। সংবিধান অনুযায়ী কেয়ারটেকার সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন এবং জরুরী অবস্খার মেয়াদ ১২০ দিন। সংবিধানে যে শাসন ব্যবস্খা নেই সেটিই অসাংবিধানিক এবং অবৈধ। সংবিধান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার বৈধ। কেয়ারটেকার সরকার প্রধান নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে আমাদের সময় দায়িত্ব নেয়া তথা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের কথা সংবিধানে উল্লেখ আছে। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদ সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে নিয়োগ করা হয়নি। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ৬টি অপশন আছে তাতে বিচারপতিদের চারটি অপশনের পর এবং প্রেসিডেন্টের ৬ষ্ঠ অপশনটি ছাড়া যে পঞ্চম অপশনটি রয়েছে তাতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংবিধান লংঘন করা হয়েছে।

ঠিকানা: এর জন্য প্রধান দুটো রাজনৈতিক দলকে আপনি কতটুকু দায়ী মনে করেন?

মোখলেস: আমাদের রাজনৈতিক সহনশীলতার অভাব ও আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদূরদর্শিতার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত তাদের নেতৃত্ব পর্যায়ে বিশ্বাস করে যাদেরকে বসানো হয়েছিলো এবং কতিপয় রাজনৈতিক নেতা শটকাটে ক্ষমতায় যেতে ও দুর্নীতর কথিত বিচার থেকে বাঁচতে বেঈমানী করেছেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

ঠিকানা: অনেকেই বলেন ১/১১ পূর্ব পরিকল্পিত। আপনিতো এই ঘটনার ঐতিহাসিক সাক্ষী। কিছু বলবেন কি?

মোখলেস: এই ঘটনা যেদিন ঘটেছে সে দিন এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। অনেক আগে থেকেই এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো। দুই নেত্রীকে আমি একাধিকবার আমার আশংকার কথা ব্যক্তও করেছিলাম। তাদের দুই জনকে এক সাথে বসাতে চেয়েছিলাম। বেগম খালেদা জিয়া বসতে রাজি হয়েছিলেন কিন্তু শেখ হাসিনা বসতে চাননি। কারণ বিএনপির ওপর শেখ হাসিনার ক্ষোভ ছিলো।

ঠিকানা: ড. কামাল হোসেনের কোন ভূমিকা ছিল?

মোখলেস: ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী এবং কর্নেল অলি দীর্ঘদিন থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশ বিশেষও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলো। পাঁচ বছরে বিএনপি সরকারের পুরোটা ভোগ করে সেই সরকারের বিদায়ের আগে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বি. চৌধুরী ও কর্নেল অলির দলে ঘটা করে যোগদানের ঘটনাতো সবাই দেখেছেন। ড. কামালতো ২০০৫ থেকে এ প্রক্রিয়ায় জড়িত উল্লেখ করে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন। ড. কামাল সম্পর্কে আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও শেখ হাসিনা যা বলেছেন তাতে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে। তার কালো টাকা সাদা করা, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিþতানে থাকা, নির্বাচনে জয়লাভ না করতে পারা ও অগণতান্ত্রিক শক্তির দালালী করার ঘটনার সাক্ষীতো সবাই।

ঠিকানা: আপনি কি মনে করেন ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে এবং যে নির্বাচন হবে তার মাধ্যমে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে?

মোখলেস: এখন সরকারের যে প্ন্যান রয়েছে বা তারা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে করে মূল সাঁতারুদের হাত পা বেঁধে তাদের পানিতে ফেলে সাঁতার দেয়ার মতো ব্যবস্খা করা হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে সীমিত সংখ্যক জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাতে প্রকৃত জন রায় ফুটে উঠবে না।

ঠিকানা: নির্বাচন হবে বলে কি আপনি মনে করেন?

মোখলেস: নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন কীভাবে করা হবে সেটাই প্রশ্ন।

ঠিকানা: ১/১১ পর শেখ হাসিনার সাথে আপনার কি যোগাযোগ হয়েছে বা কথা হয়েছে?

মোখলেস: শেখ হাসিনা একজন নেত্রী। তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতেই পারে।

ঠিকানা: দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা সম্পর্কে আপনার মìতব্য কী?

মোখলেস: দুর্নীতি দমন অভিযান প্রথমে যেভাবে শুরু করা হয়েছিল দুই নেত্রী তাতে কোনো আপত্তি করেননি। দুই নেত্রীকে আনটাচড রেখে সত্যিকার অর্থে যারা বাংলাদেশে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের যদি সুষ্ঠু বিচার করা হতো তাহলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস দুই নেত্রীর সমর্থন সরকার পেত এবং এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসতো তাদের পক্ষে দুর্নীতি করা কঠিন হয়ে পড়তো। দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলাগুলো যদি সৎ উদ্দেশ্যে দেয়া হতো তাহলে তাদের বিদেশে চিকিৎসায় পাঠালে পরে দেশে ফেরা যাবে না, রাজনীতি ছাড়তে হবে, রাজনীতি ছাড়লে দুর্নীতির মামলা তুলে আজীবন সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হবে ইত্যাদি উদ্যোগ নেয়া হয় কেন? এর ফলে সবাই আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারছেন বলে আমি মনে করি। দুই নেত্রীকে মাইনাস করার উদ্দেশ্য থেকে প্রমাণিত হয় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে নেতৃত্ব থেকে বের করে দেয়া। বাংলাদেশের জনগণ যদি তাদেরকে চায়, তাহলে পৃথিবীর এমন কোন গণতন্ত্র আছে, যে গণতন্ত্রে তাদের বের করে দেয়ার কথা বলা হবে! আমি এক দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা করবো আরেক দিকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধা করবো অথচ তাদের উত্তরাধিকার হিসাবে যারা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন সেই দুই নেত্রীকে মাইনাস করতে চাইবো, এটা কি গণতন্ত্রের পক্ষে? আমরা একটি নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মহা জোট অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতো। এই দুটি দলের একটি দলকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে তা ছিলো আমাদের কল্পনারও অতীত। কিন্তু আজ দেখছি একটি প্রধান দল নয়, দুটি প্রধান দলকে বাইরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটাই কি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথ বাþতবায়নের নমুনা?

ঠিকানা: বাংলাদেশে এখন সর্বক্ষেত্রেই অস্খিরতা- এর কারণ কী?

মোখলেস: আমি মনে করি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না থাকাই এর মূল কারণ। গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলা হয় ডেমক্রেসি ইজ দা বেস্ট ফর্ম অব রুল ইভেন ইফ ইট ইজ দ্য ওয়ার্স্ট।



ঠিকানা: আপনি বঙ্গভবনের দিনগুলো নিয়ে একটি লেখা শুরু করেছিলেন। কয়েকটি পর্ব দেখেছিলাম এখন দেখছি না, কারণ কী?

মোখলেস: বঙ্গভবনের দিনগুলো আমি ধারাবাহিকভাবে লিখছিলাম। আমি বাইরে চলে আসলে ওই লেখাগুলোর স্টক প্রায় শেষ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বাকি লেখাগুলো আমার এখনো গুছিয়ে আনতে সময় লাগছে। আমি মনে করি বাংলাদেশ আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষেরই বাংলাদেশকে নিয়ে ভাববার বা উন্নয়নে যার যার অবস্খান থেকে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। ভারতের মতো দেশে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা অন্য কেউ রাখবেন এটা চিìতাই করা হয় না। আমি যখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ছিলাম তখন এক শ্রেণীর সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিক, আমলাসহ যে সমþত লোক আমার সম্পর্কে অপপ্রচার করেছিলেন তারা কেবলই হিংসার বশবর্তী হয়ে সেই প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছিলেন। অথচ ওই উল্লিখিত শ্রেণী পেশার মেজরিটি আমার পক্ষে ছিলেন। আমি বঙ্গভবন থেকে চলে আসার পর সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন এজেন্সী আমার বিরুদ্ধে সকল স্খানে অনেকগুলো তদìত চালিয়েছেন এবং আমার সততার রিপোর্ট তারা পেশ করতে পেরেছেন। বর্তমান জামানায় এমন সৎ মানুষ থাকতে পারে দেখে তারা কেবলই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে যাবার আগে সকলকে সকল ধরনের ’ডবিíউ’ থেকে মুক্ত হতে হবে। টাকা পয়সার প্রতি লোভ রাখা যাবে না। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক তার কাছে সমান হতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতি নেয়া শপথ অক্ষুন্ন রাখতে হবে। যেমনটি আমি করেছিলাম।

ঠিকানা: বঙ্গভবনের শেষ দিনের কথা একটু বলবেন কী বা আপনি কীভাবে গেলেন এবং অন্যরা কীভাবে এলেন?

মোখলেস: বঙ্গভনের শেষ দিন বলতে অথার্ৎ ১/১১ নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কোন মìতব্য করবো না। কারণ এটি ইতিহাসের বিষয়বস্তু। ইতিহাসের প্রয়োজনেই আলোকপাত করতে চাই না। তবে এদিন কি ঘটেছিলো যারা ঘটিয়েছেন তাদের মুখ থেকেই জাতি ইতিমধ্যে অনেক খন্ড চিত্র জানতে পেরেছেন। কিছু মিডিয়া সেই দিনের ঘটনা সম্পর্কে নিজ নিজ ধারণা আনুযায়ী আলোকপাত করেছে যার সঙ্গে বাþতবতার কোনো মিল নেই। ৯০ দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার ভূমিকা রাখতে গিয়ে কমনওয়েথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার স্টিফেন নিনিয়ান বাংলাদেশী সাংবাদিকতার সেই ইমাজিনারী ভূমিকা নিয়ে কেবলই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। ১/১১ এর পর বাংলাদেশে দুর্নীতির চিত্র কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে সেই সম্পর্কে বাংলাদেশের দুর্নীতির স্বরূপ উদঘাটনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে জাতির মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখা এবং বহি: শক্রকে মোকাবেলা করা। তাদের অস্ত্র যখন জনগণ বা জনগণের নেতৃত্বের ওপর তাক করা হয় তখন আজ হোক কাল হোক যখন জনগণের সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে তখন সেই শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের কী প্রতিক্রিয়া হবে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। এক ব্যক্তির জন্যে সেনা বাহিনী ব্যবহৃত হওয়ার খেসারত কিন্তু সমগ্র বাহিনীকে দিতে হবে। ক্ষমতা চিরস্খায়ী নয়। এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই না। বাংলাদেশে এখন যার ক্ষমতা তিনি কি সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছেন? ­এই প্রশ্ন আজ আমরা মানুষের কাছ থেকে শুনি।

ঠিকানা: বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনাতো নতুন নয়। এটাকে বন্ধ করার স্খায়ী কোন পথ আছে কী?

মোখলেস: এটা বন্ধ করার একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনীতিবিদদের ক্রীড়নক হওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে রাজনীতিবিদরা তার দলের নেত্রীকে মাইনাস করতে চান, যে রাজনীতিবিদরা অন্য জায়গা থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পান বা লালিত পালিত হন, যাদের আনুগত্য তাদের নেতৃত্বের প্রতি না হয়ে অন্যের প্রতি হয়, তাদের সম্পর্কে মìতব্য করতে কোনো বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না। যতক্ষণ পর্যìত বাংলাদেশে সেই অবস্খার অবসান না হবে ততক্ষণ পর্যìত শক্তিশালী অবস্খানে অধিষ্ঠিতরা বার বার তাদের কলকাঠি নাড়বে। অনেক হয়েছে। ইনাফ ইজ ইনাফ। আমাদেরকে এখন বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে। আমরা বিদেশী কোন প্রেসক্রিপশন চাই না। বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা অনেক কম। অল্পতে তারা তুষ্ট। আমাদের শ্রম বাজার বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় অনেক সþতা। আমাদের রয়েছে কক্সবাজারের মত বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সৈকত, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বলিষ্ঠ ইতিহাস। সেই সাথে রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।



ঠিকানা: আপনারা যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন তখনো আপনাদের দেখেছি বিদেশী দূতদের সাথে বসতে­ আপনাদের কর্ম ও বক্তব্য কি স্ব-বিরোধী হয়ে যাচ্ছে না? আদৌ আমরা কি বিদেশী প্রেসক্রিপশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো?

মোখলেস: রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকলে দেশী- বিদেশী দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে বৈঠক করতে হয় এবং আমরাও সেটা করেছিলাম। ১/১১ এর ঘটনা কোনো বিদেশী প্রেসক্রিপশনে ঘটেনি। দূরে থেকে না জেনে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সেদিনের ঘটনাকে বিদেশী শক্তির ওপর চাপিয়ে দিয়ে ঘটনার মূল নায়কদের আড়াল করা হচ্ছে। সোজা কথা হচ্ছে এখন ভাসুরের নাম নিতে লজ্জা করার মতো ঘটনা। ১৯৭৫ সালে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং ১৯৯৬ সালে লে: জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশে কী ঘটেছিলো। এগুলো বাংলাদেশের মাটিতেই ঘটেছিলো। দেশী শক্তিমানরাই সেসব ঘটনা ঘটিয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনাও বাংলাদেশের মাটিতেই ঘটেছে। কেউ যখন কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তখন এর এ্যাকশন- রি-এ্যাকশন হয়। পাকিþতানে ১৯৯৯ সালের ১২ আক্টোবর জেনারেল পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে যে ঘটনা ঘটেছিলো সেটিও আমেরিকা আগে জানতো না। ১/১১ এর তিন দিন আগে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিলো যে, বাংলাদেশে সামরিক শাসন আসছে। সেই দিন জরুরী অবস্খা নয় সামরিক শাসন জারি হবার কথা ছিলো। শেখ হাসিনাও জানতেন ১২ জানুয়ারির মধ্যে ঘটনা ঘটবে। তাকে বলা হয়েছিলো- বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে গ্রেফতার করা হবে, মইনুল রোডের বাসভবন তছনছ করে ফেলা হবে। আমি তখন তাকে বলেছিলাম সবই ঠিক আছে আপনাকেও একইভাবে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে চাননি। বলা হয়েছিলো তাদেরকে ক্ষমতায় আনা হবে। একই কথা বেগম খালেদা জিয়াকেও বলেছিলাম। তিনিও বিশ্বাস করতে চাননি। দুই নেত্রীর কাছে তাদেরকে ধরার বিষয়টি ছিলো বিস্ময়। আমি দুই নেত্রীর সাথে সমঝোতা করি- যারা পরবর্তীতে ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তারা তা চাননি।

ঠিকানা: রাষ্ট্রপতি হলেন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং আপনি ছিলেন তার উপদেষ্টা। এই ধরনের একটি লিখিত চিঠি পেয়ে আপনারা কেন কোনো ব্যবস্খা নেননি?

মোখলেস: আমরা মনে করেছিলাম আমাদের ক্ষমতার উৎস জনগণের আশা- আকাঙ্খার ভরসাস্খল দুই নেত্রী। দুই নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে আমরা কিছু করতে চাইনি, যেমনটি ১৯৯১ সালে তৎকালীন অস্খায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ মনে করতেন। দুই নেত্রীর সমর্থন পেলে আমরা যে কোনো সিদ্ধাìত নিতে পারতাম। আমরা যদি সে দিন এমনি কোনো সিদ্ধাìত নিতাম তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতো। প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসাবে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার বৈঠকটা সঙ্গত কারণেই সব মহলের কাছে গোপন রেখে করতে হয়েছিলো। আমাদের লক্ষ্য ছিলো আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন নয়। আমরা ১৯৮৮ কিংবা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারির নির্বাচন চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে কোন দলের ক্ষমতায় আসার সুযোগ ছিলো। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির জন্য আমরা আওয়ামী লীগের যে সব দাবিদাওয়া মেনেছি সেটি ছিলো নজিরবিহীন। এর আগে কোনো কেয়ারটেকার সরকার সে ধরনের কাজ করেনি- বিশেষ করে ওয়াশিংটন, দিল্লি ও লন্ডনের প্রেস মিনিস্টার পদসহ দেশে- বিদেশে প্রায় ঢালাওভাবে আমরা রাজনৈতিক সরকারের দেয়া নিয়োগ বাতিল করেছিলাম। শেখ হাসিনা আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি পূর্বাপর আমাদের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। সেদিন দেখেছিলাম তিনি তার দলের গুটিকতক লোকের কাছে কতো অসহায়। প্রণব মুখার্জির কাছে আওয়ামী লীগের ৯ জন শীর্ষ নেতা লিখিতভাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। মার্কিন দূতাবাসেও নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করেছিলেন। এই বিষয়টি আমাদের পীড়া দিয়েছিলো।

ঠিকানা: এরা কারা, তাদের নাম বলবেন কী?

মোখলেস: এই নয় জন নেতার মধ্যে শেখ হাসিনার ভাষায়- ’ৗইকও’ এবং অন্যান্যরা রয়েছেন। শেখ হাসিনার সাথে আমার একাìত বৈঠকে এগুলো স্খান পেয়েছিলো। আমরা দেশে শক্তিশালী বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেখতে চেয়েছিলাম। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ দিয়ে দল ভাঙ্গাগড়ার খেলায় আমরা জড়িত হইনি। আজ দেশবাসী ও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছেন আমাদের আমলের সাথে পরবর্তী অবস্খা। বিচারের ভার জনগণের ওপর। ড. কামাল হোসেন ও ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী বার বার প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত চেয়েছিলেন। কিন্তু দুই নেত্রীসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রেসিডেন্টের বৈঠক, রাজনৈতিক সংকট সমাধান, জাতীয় ও আìতর্জাতিক কর্মকান্ড এবং সরকারের রুটিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদেরকে সাক্ষাত দিতে পারিনি। ডা. বি. চৌধুরী বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে আমাকে হাওয়া ভবন ও বিএনপির লোক বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমি তখন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছিলাম যে, বি. চৌধুরী ছিলেন আগা গোড়া বিএনপির লোক এবং তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরী ছিলেন হাওয়া ভবনের অন্যতম উদ্যোক্তা। তারেক রহমান একা হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করেননি। মাহিরা তার ডান হাত সেজে হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টিভির চাঙ্কগুলো নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন দিব্যি। বি. চৌধুরী বিএনপির এলিমেন্ট হিসাবে সংসদে বিরোধী দলীয় উপ- নেতা, সংসদ উপনেতা, শিক্ষা, স্বাস্খ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং সব শেষে দেশের প্রেসিডেন্ট পর্যìত হয়েছিলেন। পিতা পুত্র একই সংসদের এমপিও হয়েছিলেন। তারা যখন বিএনপি ও হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন তখন শুধু বলেছিলাম - একি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও বিধিতে রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা নির্ধারিত আছে। সংসদে কোনো রাজনৈতিক দলের ৩০টি আসন থাকলে সেটিকে রাজনৈতিক দল হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সংসদে কোন দলের ১০টি আসন থাকলে সেটিকে গ্রম্নপ বলা হয়। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেয়ার আগে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান প্রধান ৪টি রাজনৈতিক দলের সাথে প্রেসিডেন্টের সংলাপের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের আসলে এই রাজনৈতিক দলগুলো ও দুই নেত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা, মন্ত্রী বা বিশেষ দূত হিসাবে আমার আলাদা সংলাপও সফল হয়েছিলো। বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মধ্যে বিএনপির ক্ষমতার শেষ দিকে যে সংলাপ হয়েছিলো তাতে ৩১ দফা দাবি শেষ পর্যìত এক দফায় পরিণত হয়েছিলো। আর সেটি ছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে বিচারপতি কে এম হাসানকে নিয়োগ না করা। সেই সমস্যার সমাধান হয়েছিলো। বিচারপতি কে এম হাসান দায়িত্ব গ্রহণে অপাগরতা প্রকাশ করার সাথে সাথে আমি জনাব মান্নান ভুইয়া ও জনাব জলিলের সাথে তাৎক্ষণিকভাবে যোগোযোগ করে তাদেরকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসিয়েছিলাম। রাজনৈতিক কর্মসূচি তথা আওয়ামী লীগের অবরোধের মুখে এ দুই নেতাকে চাহিবা মাত্র পর্যাপ্ত পুলিশ এসকট দিয়ে আমরা সেদিন তাদেরকে বঙ্গভবনে এনেছিলাম। আমাদের সামনে সংবিধান নির্ধারিত ৬টি অপশন ছিলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের এ ৬টি অপশনের মধ্যে প্রথমটি ছিলেন বিচারপতি কে এম হাসান। তার অপারগতা প্রকাশের পর দ্বিতীয় অপশনে ছিলেন তার আগের প্রধান বিচারপতি বিচারপতি মাঈনুল রেজা চৌধুরী। ইত্যবসরে তার ইìেতকালের কারণে দ্বিতীয় অপশনটিও শেষ বা এঞ্জসটেড হয়ে যায়। তৃতীয় অপশনে ছিলেন সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের সর্বশেষ বিচারপতি বিচারপতি এম এ আজিজ। তিনি তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সেদিন তাকে সিইসি হিসাবে মেনে নিতে আপত্তি তুলেছিল এবং তিনি সিইসি হিসাবে অফিস অব প্রফিট হোল্ড করছিলেন, যেটি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে অযোগ্যতার মধ্যে পড়ে। সেই কারণে তৃতীয় অপশনও শেষ হয়ে যায় এবং চতুর্থ অপশনে এর আগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিচারপতি হামিদুল হকের নাম বিবেচনায় নিতে হয়। ইতিমধ্যে বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাবার আগে বিচারপতি হামিদুল হককে বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করে। সেই হিসাবে তিনিও অফিস অব প্রফিট হোল্ড করছিলেন এবং তার ব্যাপারেও আপত্তি এসেছিলো। বিচারপতি হামিদ তখন লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন যে, কোনো পক্ষ আপত্তি করলে তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেবেন না। এইভাবে চতুর্থ অপশন শেষ হয়ে যাবার পর আমরা সংবিধান নির্ধারিত পঞ্চম অপশনে যাই। এই অপশনে ছিলো বিদায়ী সংসদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ। সেই সূত্র ধরে আমরা প্রধান ৪টি রাজনৈতিক দল (বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর) সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে প্রেসিডেন্টের সংলাপের আয়োজন করি। সেই সংলাপে ৪টি দল একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির পক্ষে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি প্রেসিডেন্টকে সংবিধান নির্ধারিত পন্থায় পঞ্চম অপশন শেষ হয়ে যাবার প্রেক্ষিতে ৬ষ্ঠ ও সর্বশেষ অপশন অনুযায়ী দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের প্রþতাব করে। ২৯ অক্টোবর ২০০৬ সালে সকাল থেকে দুপুর পর্যìত সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের দিন বিকেলে বিচারপতি কে এম হাসানের অপারগতা প্রকাশ করার পর আমরা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সেক্রেটারীদ্বয়ের সঙ্গে সংলাপ করছিলাম। তখন তারা দুই জনই প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন সংকটের সমাধানতো হয়েই গেল। আমরা দুইজন যেখানে পৌঁছেছিলাম এবং সমাধান করতে পারিনি­ মহামান্য রাষ্ট্রপতি এখনতো সেই সমস্যার সমাধান হয়েই গেছে। তখন আমরা পঞ্চম অপশন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরীর নাম বিবেচনায় নিই। বিএনপির এক গ্রম্নপ তার পক্ষে। আর অপর গ্রম্নপের বিরোধিতার কারণে আসে আপত্তি। জনাব চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও তখন বলেছিলেন সব পক্ষ একমত না হলে তিনি বিতর্কিত দায়িত্ব নেবেন না। জনাব জলিল রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলেন, সংবিধানের এ সংক্রাìত অন্যান্য অপশন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে এবং যদি আমরা একমত হতে না পারি তাহলে প্রেসিডেন্টের সংবিধান অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণে আমাদের আপত্তি নেই- এই কারণে যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিছু আগে যখন আপনি অসুস্খ হয়ে পড়েছিলেন বিএনপির একটি অংশ ও হাওয়া ভবন আপনাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরাতে চেয়েছিলো তখন আমরাই আপনার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের দলে তোফায়েল আহমেদসহ আপনার অনেক ছাত্র আছে। আপনি দায়িত্ব নিলে আমরাই বেশি খুশি হবো। প্রেসিডেন্ট সেই সংলাপে বলেছিলেন আমি এখনো পুরোপুরি সুস্খ হইনি। আপনারা যদি সমঝোতায় না আসতে পারেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনে দেশ ও জাতির স্বার্থে আই কুড অফার মাইসেল্ফ। জনাব জলিল সেই সংলাপ শেষে বঙ্গভবনের বাইরে এসে অপেক্ষমান টিভি ক্যামেরাগুলোর সামনে বলেছিলেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ’ সংকটের সমাধান হয়ে গেছে। আমরা ধানমন্ডিতে কিছুক্ষণের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দ দলের বৈঠক শেষে এ ব্যাপারে বিþতারিত জানাবো। আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি। কিন্তু তিনি ধানমন্ডিতে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা সেদিন শেখ হাসিনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জলিলকে দালাল দালাল বলে সংকটের সমাধান হতে না দিয়ে আপত্তি উঠিয়েছিলেন। নেত্রীকে দিয়ে প্রেসিডেন্টের নাম বিকৃত করিয়ে ইয়াজউদ্দিনকে ইয়েস উদ্দিন বলানো হয়েছিলো। শেখ হাসিনার সাথে আমার বৈঠকের পর ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলের একটি কক্ষে শেখ হাসিনার প্রতিনিধিদের সাথে ফলোআপ মিটিং এ বসে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার জন্য বিভিন্ন দাবি দাওয়া মানার মাধ্যমে সংকট সমাধানের কাজ করেছিলাম। আমার বাসায় শেখ হাসিনার একজন প্রতিনিধি দুই দিন কেন গিয়েছিলেন সেজন্য তোফায়েল আহমেদ সুধা সদনে এসে আওয়ামী লীগের ঐ একনিষ্ঠ ব্যক্তিকে বিএনপির দালাল দালাল বলে চিৎকার করেছিলেন। এমন কি শেখ হাসিনা একা সামাল দিতে না পেরে শেখ রেহানাকে ওই সময় কেন ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন সেজন্যও একই ব্যক্তি সুধাসদনে গিয়ে রেহানাকে কেন আনা হলো চিৎকার করছিলেন। প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আওয়ামী লীগের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও মহাজোট রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মেনে নিয়েছিলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল প্রেসিডেন্টের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলো। শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্টের সাথে একাìত বৈঠকও করতে চেয়েছিলেন এবং আমি সেই সুযোগও করে দিয়েছিলাম। সেদিন যে মহলটি চায়নি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনা হোক সেই মহলটি আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল। শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে একাìত বৈঠকে বলেছিলেন­ আমরা নির্বাচনে আসতে চাই, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। যদিও কে এম হাসান ইস্যুর সমাধান হয়েছে তথাপি আপনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে একটু ভূমিকা নিয়ে যদি সিইসি বিচারপতি আজিজকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সরানো সম্ভব না হয় নির্বাচন পর্যìত তাকে ছুটি দিয়ে হলেও আমাদের নির্বাচনে আসতে দিন। আমরা কোন সন্দেহের মধ্যে থাকতে চাই না। সেই দিন আমরা এ অসম্ভব কাজও আল্লাহর রহমতে সম্ভব করেছিলাম। যদিও এরপর তাদের বিশেষ করে তোফায়েল আহমেদের শেখ হাসিনার ওপর উপর্যুপরি চাপের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে অতিরিক্ত হিসাবে নির্বাচন কমিশনার শ. ম জাকারিয়াকেও আমরা ছুটিতে পাঠিয়েছিলাম। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেবল অংশই নেয়নি, ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় থাকার পর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহরের জন্য দুই দিন সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করলে আমরা তাও মেনে নিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ জোট সাতদিন আর দুদিন মিলে মোট নয়দিন নির্বাচনে ছিলেন। সেই নির্বাচন কেন হয়নি? কেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলো? কেন সেদিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিলো? কারা সেটি করেছিলো? কারা প্রকাশ্যে ছিলো? কারা ছিলো নেপথ্যে? এগুলোর তদìত হলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। কারা সেদিন বিএনপিকে বলেছিলো আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন করতে হবে। আর আওয়ামী লীগকে বলেছিলো একটির পর একটি দাবি দিতে হবে। আমরা ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করলে কে সেনাবাহিনীকে ইনএকটিভ করে আওয়ামী লীগকে আবার মাঠে নামিয়েছিল। লগি- বৈঠার কর্মসূচি কীভাবে হয়েছিলো? লগি- বৈঠার কর্মসূচির সময় সংঘাত, হত্যাকান্ড শুরুর পূর্ব মুহূর্তে কেন সেদিন পুলিশকে সরিয়ে নেয়া হলো? কারা সে দিন এ কাজগুলো করেছিলো? প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে কারা নিয়োজিত ছিলো এইগুলো তদìত করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বলেছিলেন জেদের ভাত কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো। ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর আমাদের আমলে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঢাকা সেনা নিবাসের সেনাকুঞ্জে প্রতিবছরের মতো যে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় সেখানে এই প্রথম দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মাঝখানে দশটি চেয়ার বসিয়ে কৃত্রিম দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়। প্রেসিডেন্ট ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেনা প্রধান এভাবে বসার ব্যবস্খা করেছিলেন বলে পরে জানা যায়। প্রেসিডেন্ট সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কও। আমরা প্রেসিডেন্টের সাথে ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমাদের পক্ষ থেকে সেনা বাহিনীর কর্মকর্তারা এ আয়োজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস না করেই একটি পরিকল্পনা থেকে এভাবে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বসার ব্যবস্খা করেছিলো। এমন কি প্রেসিডেন্ট ছাড়া তারা যাদেরকে মনে করেছিলো কেবল তাদেরকেই ওখানে ঢুকতে দেয়া হয়েছিলো। আশ্চর্যজনক হচ্ছে সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীকে প্রবেশ ও প্রস্খানে তারা এমনভাবে দিক দেখিয়েছিলেন যাতে কারো সাথে কারো দেখা না হয়। তাদের দুজনের সহযোগীদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এমন কি প্রেসিডেন্টের সার্বক্ষণিক প্রয়োজন জানা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বা মন্ত্রী হিসাবে আমাকে সেখানে যেতে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। যেখানে সাংবিধানিকভাবে আমার নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য, সেখানে আমাকে ঢুকতে না দেয়ার একটি কারণ ছিলো যাতে দুই নেত্রীকে এক জায়গায় না আনা হয়। দু’জনের সাথে আমার ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণে তাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাত হয়ে যেতে পারে এ ছিলো বিশেষ ব্যক্তির আশংকা। ওই ব্যক্তিটি সেনা কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, একজন সিভিলিয়ান দেশ চালায়। অবশ্য তাকে অনেকে বলেছিলেন সংবিধান অনুযায়ী সিভিলিয়ানেরই দেশ চালানোর কথা। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর আমাকে সেনা কর্মকর্তারাই এ কথা জানিয়েছেন।



ঠিকানা: আপনি বিষয়টি একটু পরিষ্কার করবেন কী?

মোখলেস: বাংলাদেশে আমাদের আমলে দুটি সংলাপ সফল হবার প্রমাণ হচ্ছে- সংলাপের প্রেক্ষিতেই আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে নির্বাচনে আনতে পেরেছিলাম। এটি একটি সাফল্য। আর দ্বিতীয় সাফল্যটি হচ্ছে সংলাপের প্রেক্ষিতে সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণকে একইভাবে মহাজোট মেনে নিয়েছিলো। জরুরী অবস্খা জারির তৃতীয় এ্যাটেম্পট সফল হয়েছে। এর আগে একই ধরনের দুটি এ্যাটেম্পট ব্যর্থ হয়েছিলো। ২৯ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর যে এ্যাটেম্পটটি নেয়া হয়েছিলো সেটি বাþতবায়নের জন্য সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও পর্যìত কনভিন্সড করে ফেলা হয়েছিলো। আর দ্বিতীয় দফায় আমরা যখন ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার সারা দেশে সিআরপিসির অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছিলাম তখন দ্বিতীয় এ্যাটেম্পটটি নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু জরুরী অবস্খা ছাড়াই সকল সংকটের সমাধান সম্ভব এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব ছিলো। অতীতেও হয়েছে। দেশব্যাপী সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পর কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আরোপিত অবরোধও তুলে নেয়া হয়েছিলো। এরপর সশস্ত্র বাহিনীকে কারা সেদিন অকার্যকর করেছিলো? আবার অবরোধ বসানোর ইন্ধন দিয়েছিলো? সেনা বাহিনীর সদস্যরা রেস্টে আছে বলে দেয়া বক্তব্য কোন সূত্রে গাঁথা ছিলো? এই প্রশ্নগুলোর মধ্যেই সংকট জিইয়ে রাখার অনেক উত্তর নিহিত আছে। শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসাবে বিদায়ী সংসদে দেয়া সমাপনী বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ উক্তি করেছিলেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে মুখোমুখি করে রাখা এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন আমাদেরকে সংবিধানের মধ্যে থেকে কাজ করতে না দিয়ে সংকট জিইয়ে রাখার কথা যারা নেপথ্যে থেকে বলেছিলো পরবর্তীকালে আমরা দেখলাম তারা কীভাবে সংবিধানকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের দোহাই দিয়ে সেদিন বিশ্ব সংস্খাকে যেভাবে বস্ন্যাক মেইলিং করা হয়েছিলো তার রহস্য নিশ্চয়ই যথা সময়ে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। তারেক রহমান যুক্তরাষ্ট্রে আসলে অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ফেলে কারা সেদিন ওয়াশিংটন থেকে নিইউয়র্ক পর্যìত একাধিকবার প্রটোকল দিয়েছিলেন? কারা নিজের রাষ্ট্রের প্রতি নি:শর্ত আনুগত্য প্রকাশ না করে বিদেশী স্ত্রী বিয়ে করে অর্পিত এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ না করে সংবিধান ভেঙ্গে শপথ নিয়েছিলেন? শপথ নেয়ার কয়েক দিন পরে সরকারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অবশ্য অবৈধ কার্যক্রম জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ভাবে কারা বেঈমানী করেছেন? কারা বিএনপি সরকারের কাছ থেকে দফায় দফায় রাজনৈতিক কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়েছিলেন এবং কে অনেককে ডিঙ্গিয়ে পদ দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে এর রিটার্ণ কীভাবে দিয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর আজ আর আমাকে দিতে হচ্ছে না, দেশী- বিদেশী সকলেই আজ নির্দ্বিধায় সেই উত্তর দিতে পারছেন।



দুর্নীতি রোধ করা কোন নির্দিষ্ট সময়ের বিষয় নয়। দেশে দেশে দুর্নীতি আছে, দুর্নীতি থাকবে। এই দুর্নীতি রোধে একটি স্খায়ী ব্যবস্খা থাকতে হবে। বর্তমান স্বাধীন দুদক রাজনৈতিক সরকারই পাস করেছিল। আমাদের আমলে নামে হয়তো স্বাধীন বিচার বিভাগ ছিলো না। ছিলো না স্বাধীন দুর্নীতি দমন কাগজে স্বাধীন এবং কাজে নজিরবিহীন পরাধীন ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। সরকারের পক্ষ থেকে তালিকা করে দিয়ে বিপক্ষের কম দুনীতিবাজদের ধরা এবং পক্ষের সংস্কারপন্থী রাঘব বোয়াল দুর্নীতিবাজদের না ধরার মতো পক্ষপাতিত্বের কাজ আমরা করিনি। আর যাই হোক বিচার কার্যে নিরপেক্ষতা অবলম্বন না করলে যে কঠোর হবে তা পবিত্র কোরআনেই উল্লেখ করা আছে। রাজনীতির নামে বিচারের আয়োজন আবার রাজনীতি থেকে অবসর নিলে সে বিচার না করার উদ্যোগটি এই ইস্যুকে সমাধি দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশে গত ৩৭ বছরে নাকি কিছু হয়নি। যমুনা সেতু হয়েছে, সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা, আইসিটি, নারী উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে এর জন্য বাংলাদেশের একক কোনো সরকারের কৃতিত্ব নেই। গণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারি সকল সরকারেরই ভূমিকা রয়েছে। এই ৩৭ বছরেই লেফটেল্যান্ট থেকে অনেকে লেফটেল্যান্ট জেনারেল হয়েছেন। কেউ যোগ্যতার ভিত্তিতে আবার কেউ দশজনকে ডিঙ্গিয়ে কিংবা পরবর্তীতে জনস্বার্থের কথা বলে পদ পেয়েছেন। সিভিল মিলিটারীর বড় বড় পদ করায়ত্ত্ব করেছেন। অনেকে কোটিপতি হয়েছেন। কথা বলার সময় আমরা নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখি না, সীমারেখার কথা মনে রাখি না। প্রত্যেকের একটা গন্ডি আছে। উর্দিপরে কোনো দেশে কেউ কথা বলতে পারে এটা কল্পনার অতীত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ এই সেদিন জেনারেলদের উদ্দেশ্যে ফরমান জারি করেছেন যে, ইরাক যুদ্ধ নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবেন না। এক জেনারেল কথা বলায় তাকে ধমক দেয়া হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের প্রতি যে আচরণ করছেন এখানে এসে ট্রেনিং নিয়েও আমাদের লোকজন শিক্ষা পাননি। বাংলাদেশে দু’ একটি সংবাদপত্র গণতন্ত্রে স্বচ্ছন্দ্য অনুভব করে না। স্বৈরশাসক তাদের পছন্দ। গণতান্ত্রিক সরকারদ্বয়ের আমলে তারা ইচ্ছা মতো কলম চালিয়েছেন। সেটি নিয়ে প্রশ্ন হতো না যদি ওয়ান ইলেভেনের পর অসাংবিধানিক ও অবৈধ শাসনকালে তারা তাদের কলমকে সঙ্গত কারণেই আরো শানিত করতেন। তারা কলম চালাবেন কি উল্টো আরো দলালি করছেন। যারা পতিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই এখনো সোচ্চার ওই গোষ্ঠি। ক্ষমতাসীনদের অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নয়, যারা ক্ষমতায় নেই তাদের বিরুদ্ধেই তাদের যেন সব অক্রোশ। দুর্নীতির দায়ে তাদের দুই সম্পাদককে এ্যারেস্ট করার সিদ্ধাìত হলে তারা সেনাপ্রধানের হাত- পায়ে ধরে রক্ষা পেয়েছেন। এদের একজন ধর্মের ওপর আঘাত দিলে আরো একবার গ্রেফতার হওয়ার কথা ছিলো। একদিকে তওবা করে ও অপরদিকে মাফ চেয়ে গর্তে ঢুকেন। শুধু এবারই নয়, ১৯৯১’র পর থেকেই গণতন্ত্র হত্যার জন্য এই সম্পাদকটি জেনারেলদের পিছনে ঘুরঘুর করতেন। জেনারেল নাসিম, জেনারেল মতিন, জেনারেল ইমাম, জেনারেল ভূইয়া, এমন কি জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর কাছে অনেকবার ধর্ণা দিয়েছেন। আরেক সম্পাদক ৯১’র পর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির দ্বারা অফিসসহ আরেকবার আক্রাìত হলেও এখন তার কেবলা তাদের দিকেই। ’র’ এর কাছ থেকে একশ কোটি টাকা চেয়ে দশ কোটি টাকা পেয়েছেন, টাটার বাড়িতে জামাই আদর নিয়েছেন এবং সামরিক লোকজনের দালালির আগের ইজারা এখন তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে ব্যবসা- বাণিজ্য- সুবিধা না পেলে তাদের কাছে স্বৈরশাহীও ভাল। তবে তারা প্রকাশ্যে দালালির কথা স্বীকার করেন না। বাংলাদেশে এমন দু’একজন আছেন যারা খারাপ হোক আর যাই হোক সরাসরি সামরিক স্বৈরশাহীর দালালি করে লিখেছেন কিন্তু এই সম্পাদকরা সাহস করে তাদের ’ হিডেন এজেন্ডার’র কথা বলতে পারেন না। ছাত্র রাজনীতি আর বড়দের রাজনীতিতে এরা কমিউনিজম আর পৈত্রিক সূত্রে রাজাকার হলেও এখন টাকার কুমির হয়ে বসে আছেন। ভারতে একবার জেনারেল মানেকশ’সহ সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে বলার চেষ্টা করে ছিলেন স্যার, আই থিঙ্ক...। তাকে থামিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন- বিয়িং ডিফেন্স অফিসিয়াল ইউ শুড নট হ্যাভ এ্যানি থিঙ্কিং। আরেকবার একই ধরনের মিটিং এ ভারতের নৌ বাহিনীর প্রধান তৎকালীন জাতীয় বাজেটে নৌবাহিনীর জন্য বরাদ্দ কম হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে’ স্যার, ইন দিস ইয়ারস বাজেট, নেভিজ পজিশন ইজ... বলার সাথে সাথেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ’ইন দা ডেপ্থ অব সি’। দুটি ঘটনাই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দুই জন প্রধান রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রীর বক্তব্যের ম্যাসেজ বুঝে সরি বলে সেখানে ক্ষাìত দিয়েছিলেন। আরেকবার স্বাধীনতার পর পরই ফিল্ড মার্শাল মানেকশ’ বাংলাদেশ সফরে এলে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের দেয়া পার্টিতে হাই কমিশনারের জন্য নির্ধারিত সারিতে দাঁড়ালে তৎকালীন ভারতীয় হাই কমিশনার সুবিমল দত্ত বলেছিলেন, স্যার, দিস ইজ হাই কমিশনার’স এরিয়া, ডোন্ট কাল্টিভেট হেয়ার, ইউ কাল্টিভেট আদারস এবং গো দেয়ার, উল্টো দিকে ইনডিকেট। এই সব ঘটনা গণতন্ত্রের প্রতি সস্বস্ত্র বাহিনীর আনুগত্য প্রকাশেরই নমুনা। কোনো দেশে সশস্ত্র বাহিনী যখনই নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে নিজেদের গরজে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গেছেন তখনই পরবর্তীতে তাদের কী অবস্খা হয়েছে ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যায়। দু:খ বা দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিষ্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদসহ যারা সশস্ত্র বাহিনী চান না, তারাই আজ তাদের বন্ধু ও পরামর্শদাতা হয়েছেন। আর যারা বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সর্বশেষ ১৫ বছরে এই সশস্ত্র বাহিনীকে হৃষ্টপুষ্ট করে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন তারা হয়ে গেলেন তাদের শক্র। আলেকজান্ডারের ভাষায় বলতে হয়­ “সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!”১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর দুর্নীতির বরপুত্র হিসাবে সিংহাসন থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তার আমলে দুর্নীতির দায়ে প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও কুপোকাত হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্নীতি আর রাজনীতি সমার্থক হয় না। বাংলাদেশে ১/১১ এর পর কারা জমিজমা, গাড়ি, ফ্লাট ও দেশে বিদেশে সম্পদের মালিক হয়েছেন­ সেই প্রশ্ন আজ কেন উঠছে? কেন কিছু বিশেষ লোকজনকে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের বাইরে রাখা হয়েছে? এমন প্রশ্ন কি ইন্সস্টিটিউশনের ক্ষতি করছে না? স্বাধীন বিচার বিভাগের অবস্খা এমনই হয়েছে যে, একজন প্রধান বিচারপতিকে ঢাকায় বাড়ি নিয়েও হলফনামা দিয়ে জানান দিতে হয়েছে যে তার কোনো বাড়ি নেই। সেই প্রধান বিচারপতি দুটি বাড়ির মালিক। মিথ্যা হলফনামা ব্যবহার করার কারণে তাকে পুতুলের মত নাচিয়ে সাহসী রায় দেয়া বিচারপতিদের বেঞ্চ কীভাবে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এবং কীভাবে বিচারের বাণী নীরবে নিবৃত্তে কেঁদেছে তা জনগণ প্রত্যক্ষ করেছেন। এ ক্ষেত্রে কবিগুরুর ভাষায়­ ‘চোর, তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে’ ... এই পংক্তিই খাটে।



ঠিকানা: আপনি বলেছেন বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি বার বার ওই ধরনের ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঘটতে থাকে, জনগণ যদি সত্যি সত্যি দাঁড়িয়ে যায় এর জন্য দায়ী হবে কে বা কারা?

মোখলেস: এই ধরনের ঘটনা ঘটবে কিনা বা ঘটার সম্ভাবনা আছে কী না তা আমি বলতে পারবো না। তবে এ কথা বলা যায়- এবার যে ঘটনা ঘটেছে তাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আজ হোক কাল হোক রাজনীতিবিদসহ সকলকে ভাবতে হবে এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করার ব্যাপারে নতুন করে নতুন ভাবে ভাবতে হবে। এখনো সময় আছে সংশিস্নষ্ট যারা এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন তাদের যদি বোধোদয় হয় তাহলে সংকট উত্তরণ করা সম্ভব এভাবে এ ধরনের ঘটনা রোধ করার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।

ঠিকানা: তাহলে এই প্রতিষ্ঠান রেখে লাভ কী?

মোখলেস: প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। রাখতে হবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্যে। এখানে প্রতিষ্ঠানের ে দাষ নেই। দোষ ব্যক্তির। অতীতে সুযোগ পেলেও ক্ষমতা না নিয়ে গণতন্ত্র অক্ষুণí রাখার নজির আছে। আমাদের ক্রটি সিস্টেমের। সিস্টেম ঠিক করতে হবে। অবশ্য এই প্রশ্নটি ইতিমধ্যেই উঠেছে। এখন যদি বোধোদয় না হয় ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রþত হবে। ভবিষ্যতে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন বা দেশ পরিচালনা করবেন নিশ্চয় তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।

ঠিকানা: এরশাদের নমিনেশন কারা বাতিল করেছেন?

মোখলেস: আমরা যারা ক্ষমতায় ছিলাম তারা এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করিনি, ইসি করেনি এবং শেখ হাসিনাও করেননি।



ঠিকানা: এটার মধ্যে কি ষড়যন্ত্র ছিলো?

মোখলেস: আশা করি আমার কথায় নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন।

ঠিকানা: তাহলে কারা করেছেন এবং কেন?

মোখলেস: এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে শর্টকাট ওয়েতে। সংশিস্নষ্ট কাউকে কিছু না জানিয়ে রিটার্নিং অফিসাররা করেছেন এবং কীভাবে করেছেন তা তারা জানেন। রিটার্নিং অফিসার যদি এরশাদের মনোনয়ন বাতিলও করে থাকেন নির্বাচন কমিশন সেই সিদ্ধাìত পরিবর্তন করতে পারে নি। আইনের মধ্যেই তা আছে। অবশ্য ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন রিটার্নিং অফিসার। তিনি এরশাদের নমিনেশন বহাল রেখেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তাকে অন্য ডিসিদের সিদ্ধাìত ফলো করতে বলা হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর রাজনীতিকরা রুখলে এভাবে ক্ষমতার অপ্রয়োগ করেননি। বিভিন্ন বক্তার টক শোতে এবং লেখকদের লেখায় প্রকাশ পাচ্ছে বিচারপতিদের সামনে টেবিলে কী রাখা হচ্ছে এবং কীভাবে তাদেরকে রায় প্রদানে পরাধীনতার শৃঙ্খল পরানো হয়েছে।



ঠিকানা: এটা কি ফেয়ার ছিলো?

মোখলেস: ফেয়ার হবে কীভাবে। এরশাদ সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। সে অনুযায়ী তিনি পাঁচ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না। সেই পাঁচ বছর পার হয়ে যাওয়ার আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। তার নামে কোর্টে একটি কেইস পেইন্ডিং ছিলো। সে মামলার রায় হবে। রায়ের পরে সিদ্ধাìত হবে। এটাই ছিল তখন বাþতবতা। পেইন্ডিং কেইসের কারণে তার মনোনয়ন কীভাবে বাতিল করা হয়। সাবেক সরকারের একজন অত্যìত প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রী পরে যিনি বিগতদের হয়ে কাজ করেছিলেন যাকে দিয়ে এরশাদকে অনেক আগেই চারদলে আনা হয় এবং এরশাদ মাহজোটে চলে যাওয়ার উল্টো সিদ্ধাìত গ্রহণে কারা তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন যাদের কথায় ডিসিরা এতবড় সিদ্ধাìত দিতে পারলেন তা বুঝতে কি কোনো অসুবিধা হয়?



ঠিকানা: এরশাদতো কোর্টে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত?

মোখলেস: এরশাদ কোর্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কী হয়েছিল জানি না। পুরো বিষয়টিই রহস্যে ঘেরা।

ঠিকানা: এরশাদের মনোনয়ন পত্র বাতিল এবং এখন যে তার ভূমিকা- এর মধ্যে কী কোন যোগসূত্র আছে?

মোখলেস: অবশ্যই এবং তাকে বলা হয়েছিলো আপনার মনোনয়ন বাতিল করা হবে এবং আপনি এর বিনিময়ে সুবিধা পাবেন এবং তিনি পাচ্ছেন। সেই নির্বাচন না হবার ফলে তিনি তার মামলাগুলোতে জিতে যাচ্ছেন। এটা কি আপনারা দেখছেন না?

ঠিকানা: ১/১১ এর যারা নায়ক তারা সবাই বিএনপির শাসনামলে অনেক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এরা যে ১/১১ ঘটাবেন, এটা কি বেগম জিয়া জানতেন?

মোখলেস: এটা বেগম জিয়া জানতেন না। তিনি তাদেরকে বিশ্বাস করেছিলেন। তারা সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার লোভ তাদের অন্ধ করে দিয়েছিল। আমি সেদিন এসব বিষয় বললে বলা হয়েছিল আপনি বেশি টেনশন করছেন। যখন বললাম আমি আল্লাহর অþিতত্বে বিশ্বাসী এবং টেনশন নয় বাþতবতা বলছি তখন বলা হলো­ ওকে আল্লাহই ভরসা। আগেই বলেছি- কারা সেদিন ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্কে প্রটোকল দিয়ে ট্রেনে করে তারেক রহমানকে নিয়ে এসেছিলেন। কারা সেদিন দফায় দফায় নিয়োগ নিয়েছিলেন? একজন গভর্নরের (বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের) বয়সসীমা অতিক্রমের পরও তাকে আবার একই পদে নিয়োগ দিতে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। শেষ পর্যìত তিনি শেষ ছয় মাসের জন্যেও চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ নিয়েছিলেন? পরবর্তীতে তাকে অন্য একটি পদে নিয়োগ দিতে ওখানকার দয়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে গভর্নর বানাতে হয়েছিল।। বাংলাদেশে রাজনীতিবিদরাই শুধু দুর্নীতিবাজ আর অন্য সবাই ধুয়া তুলসী পাতা? কারা রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি করতে সহযোগিতা করেন? কারা তাদের দুর্নীতির পথ দেখান? তাদের কোন কিছু হয় না। আমরা তাই দেখছি। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে যদি পক্ষপাতিত্ব করা হয়, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে যদি সঠিক বিচার না করা হয়, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে যদি মাইনাস থিওরির দিকে এগিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে তা হবে যারা জিরো ছিলেন তারা হবেন হিরো এবং যারা সত্যি সত্যি দুর্নীতি করেছেন তারা এই সুযোগে বেরিয়ে যাবেন এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ব্যর্থ হলে ১৫ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে দুর্নীতি হয়ে যাবে লাগামহীন। এটা সংশ্নিষ্ট সকলে যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন ততই মঙ্গল।

ঠিকানা: বেগম জিয়া তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে ইনফরমেশন দেয়ার জন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ছিলো। তারা কি কোন কিছুই খালেদা জিয়াকে জানান নি বা তিনিও কি কিছুই জানতেন না?

মোখলেস: একটা কথা আছে, জয়ের সময় ক্ষয় নেই, মরণকালে ওষুধ নেই, আরেকটি কথা হলো- ’বেড়ায় যদি ক্ষেত খেয়ে ফেলে তাহলে এর তো কোনো প্রতিকার নেই’। এখন ঘটনা হচ্ছে, তিনি বিশ্বাস করেছিলেন তাদের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। এই দুজন মহান নেতাকে কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ হত্যা করেনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আরো পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোতে কারা ভূমিকা রেখেছে? নিশ্চয় বাংলাদেশের জনগণ নয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান যারা থাকেন তারা বিশ্বাস করেন। এই বিশ্বাসের পরিণতি যদি হয় বিশ্বাস ভঙ্গ, তাহলে তাদেরইবা কী করার আছে।

ঠিকানা: আপনিতো প্রেসিডেন্টের খুব কাছাকাছি ছিলেন- তিনি কি এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত?

মোখলেস: প্রেসিডেন্টের কি তখন কিছু করার সুযোগ ছিলো? কারণ ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। ১৯৯৬ সালের ২০ মে একটা ক্যু হয়েছিলো। সেই ক্যু তৎকালীন সেনা প্রধান লে: জেনারেল এ এস এম নাসিমের নেতৃত্বে হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছিলো আজ আমাদের সেই ধরনের ঘটনা ঘটাতে হয়েছে এবং তার পক্ষে সেদিন বগুড়া থেকে জেনারেল হেলাল মোর্শেদের নেতৃত্বে, ময়মনসিংহ থেকে জেনারেল আইন উদ্দিনের নেতৃত্বে এবং আরো কয়েকটি ডিভিশন একইভাবে মার্চ করেছিলো। ঐদিন নবম পদাতিক ডিভিশন আরিচা, নগরবাড়ি ও দৌলতদিয়া থেকে ফেরিগুলো সরিয়ে ফেলেছিলো, যানবহন সরিয়ে নিয়ে ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে তাদেরকে নিরস্ত্র করেছিলো। সেই দিন প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল রুহুল আমিন চৌধুরী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূইয়া, নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল ইমামুজ্জমান বীর প্রতীক এবং ডিজিএফআই’র ডিজি মেজর জেনারেল এম এ মতিন বীর প্রতীক, ৪৬ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগ্রেডিয়ার রোকন উদ্দিন ঐক্যবদ্ধভাবে জেনারেল নাসিমের ক্যুকে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্টের পক্ষে তারা অবস্খান নিয়েছিলেন। সেই কারণেই প্রেসিডেন্ট উপযুক্ত ব্যবস্খা নিতে পেরেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ঘটনা আর ২০০১ সালের ঘটনা এক নয়। প্রেসিডেন্টের অবস্খা তো ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মত। সুতরাং তার কিই বা করার আছে? সেদিন তিনি সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছিলেন। যে জেনারেলের দায়িত্ব ছিলো রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে ডিফেন্ড করা তিনি সেদিন ফাইল নিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে বঙ্গভবন থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য। এভাবে তিনি কার স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন, জানি না। পরবর্তীকালে তাকে যখন সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে আনসারের ডিজি করা হয়, বিদায় নেয়ার সময় বলে গিয়েছিলেন, একজন লোককে আমরা পেয়েছি যিনি বেঈমানী করেননি- তিনি হলেন মোখলেস স্যার। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সরে গিয়েছেন।

ঠিকানা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি গণতান্ত্রিক? এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্খায় এর কোন প্রয়োজন আছে কি?

মোখলেস: পৃথিবীর কোন দেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপস্খিতি নেই। বাংলাদেশে এই বিদঘুটে এবং ইউনিক সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে রাজনীতিবিদদের অবিশ্বাসের কারণে। রাজনীতিকরা একটি সরকারকে পাঁচ বছর বিশ্বাস করতে পারবেন- গণতন্ত্রের জন্য, বিদেশের সঙ্গে চুক্তির জন্য, দেশের স্খানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য, উপ নির্বাচনের জন্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিন্তু একটি সাধারণ নির্বাচন করার জন্য বিশ্বাস করতে পারেন না। এই কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতান্ত্রিক নয়। কারণ গণতন্ত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন স্খান নেই। অগণতান্ত্রিক লোকজন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আসেন সীমিত সময়ের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশে এই সরকার পদ্ধতিকে সাংবিধানিক রূপ দেয়া হয়েছে ফলে এটা সাংবিধানের অংশ। গণতান্ত্রিক না হলেও তিন মাসের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা সাংবিধানিকভাবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে মেনে নিয়েছিলেন বলে সংবিধানের অংশ হিসাবে এই সরকার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দ্দিষ্ট ৯০ দিন সময়ের মধ্যে নির্বাচন করে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হþতাìতর করেছেন। কিন্তু ২০০৭ সালে তত্ত্বাধায়ক সরকারের যে চেহারা হয়েছে, তাতে এ টুকু বলা যায়­ বাংলাদেশে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো কী ব্যবস্খা নেবেন বা কী সিদ্ধাìত নেবেন তা তাদের উপর নির্ভর করে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ২০০৭ সালে অকার্যকর করে দেয়া হয়েছিলো। সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- ৯০ দিনের মধ্যে কেবল মাত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা কিন্তু দেখা যাচ্ছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাদ দিয়ে অন্য নির্বাচন করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী সংশিস্নষ্ট কোন অধ্যাদেশ ছাড়া অন্য কোন কিছু করতে পারে না। কিন্তু আমরা দেখলাম ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারীর পরে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই নির্বাচন সংশিস্নষ্ট অধ্যাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন অধ্যাদেশে তারা হাত দিয়েছে- যা সংবিধান এলাউ করে না। এছাড়াও দেখা গেছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার একনেকের বৈঠকসহ বিভিন্ন বৈঠক করেছে। সংবিধানের পরিষ্কারভাবে বলা আছে- সংবিধানের ৫৮ এবং ১২৩- এই দুটো মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে- তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বলা হয়েছে- কেবল মাত্র রুটিন দায়িত্ব তারা পালন করবে, কোন পলিসি ডিসিশন নেবে না এবং সংবিধানের মধ্যে থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে দুর্নীতি দমনের জন্য জরুরী অবস্খা জারি করেছে, যে জরুরী অবস্খা ১২০ দিন বলবৎ থাকার কথা সেই জরুরী অবস্খাকে টেনে এক বছর সাত মাস পর্যìত লম্বা করা হয়েছে এবং এই জরুরী অবস্খা কত দিন থাকবে তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি-জরুরী অবস্খা বাংলাদেশে যে কারণে জারী করা হয়েছে- সংবিধানের সেই কারণে জরুরী অবস্খা জারির কথা নেই। পরিস্খিতি সৃষ্টি হলে জরুরী অবস্খা জারি করা যায় কিন্তু সেই জরুরী অবস্খার মেয়াদ ১২০ দিন। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে এটা পাশ করে নিতে হবে।



ঠিকানা: বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি বৈধ?

মোখলেস: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে সাংবিধানিক বিধান আছে সেখানে পরিষ্কারভাবে ছয়টি আফসন দেয়া আছে। প্রথম দুটো অপশন হচ্ছে ইমিডিয়েট পাস্ট চীপ জাস্টিসেস ( দুজন), তৃতীয়টি হচ্ছে এপিলেট ডিভেশনের সর্ব দুজন সিনিয়র জজ। দুই জন বিচারপতি ও দুজন জর্জের অপশন শেষ হয়ে যাবার পর যে পঞ্চম অপশন আছে তাতে আছে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ করা যেতে পারে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি, তাদের মতামত নেয়া হয়নি, তাদের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য নন, তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি। সে হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা সাংবিধানিকভাবে বৈধ নন, সাংবিধানিকভাবে বৈধ না হলে বলা যাবে অসাংবিধানিক, বলা যাবে অবৈধ।

ঠিকানা: ইদানিং শুনা যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির আতীয়- স্বজন দুর্নীতির সাথে জড়িত। আপনিতো দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপতির সাথে কাজ করেছেন- এ ব্যাপারে আপনার মìতব্য কী?

মোখলেস: রাষ্ট্রপতির আতীয়- স্বজনের যে দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, ফলাও করে পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে­ এটাও অনেকটা আগে থেকেই চালানো হচ্ছিলো কিন্তু ১/১১ এ যখন ঘটানো হয় তখন বর্তমান সেনা প্রধান রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলেন­ স্যার, আপনি এবং আপনার ফ্যামিলি উইল বি আন টাচড। তারা রাষ্ট্রপতিকে বাধ্য করেছিলেন জরুরী অবস্খা জারি করতে। এখন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী এবং ছেলের নামে দুর্নীতির কথা পত্র পত্রিকায় প্রচার করছে, এত দিন কেন এই গুলো প্রচার করা হয়নি? তারা যখন ক্ষমতা নিলেন তখনতো সকলের কথা বললেন­ রাষ্ট্রপতি বা আতীয়- স্বজনের কথা বলেননি- এখন কেন বলছেন? রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও পুত্র দুর্নীতি করেছেন কি করেননি সেটা আমি বলবো না- এটা বিচার্য্য বিষয়। তবে আমি এটা বলতে পারি- যখন যাকে দরকার তাকে দুর্নীতির একটি সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিয়ে জেলে নেয়া হচ্ছে বা সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটাও রাষ্ট্রপতিকে সরানোর জন্য একটি প্লট। এত দিন তারা রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিকভাবে ব্যবহার করেছেন, এখন সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন। স্পীকারের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকেও সরানোর চেষ্টা চলানো হচ্ছে। এই নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং বিভক্তিরও সৃষ্টি হয়েছে। এক পক্ষ এই সিদ্ধাìেতর পক্ষে থাকলেও অপর পক্ষ বেঁকে বসেছে। এখন সংবিধানের সর্বশেষ দুটো সাংবিধানিক পজিশন রাষ্ট্রপতি ও স্পীকার। ক্ষমতালোভীরা চাচ্ছেন এই দু’জনকে সরিয়ে দিয়ে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল করতে, কেউ মহাথির মোহাম্মদ হতে চাচ্ছেন। এদের সাথে রয়েছে কিছু পত্র পত্রিকা। তাদের যে সব নিউজ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে তারা কোন কিছু যাচাই- বাছাই না করেই সেই নিউজ ফলাও করে প্রচার করছে। এটাকে কোনভাবেই সাংবাদিকতা বলা যায় না। তারা স্বৈরশাহীর বশংবদ হিসাবে পরিণত হয়েছেন। কারো বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে নিয়ম হচ্ছে তাকে জিজ্ঞেস করা এবং তার কমেন্টস নেয়া। কিন্তু বর্তমানে তার কোন কিছুই লক্ষ করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতির পরিবারের করো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়, তাহলে তা তদìত করা যেতে পারে। কিন্তু এ বিষয়টা এত দিন করা হয়নি কেন? কেন করা হচ্ছে ১ বছর ৭ মাস পরে? নিজের সুবিধার জন্য এক সময় বলা হয়েছিলো স্যার আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে টাচ করা হবে না। এখন কেন তাদের টাচ করার চেষ্টা করা হচ্ছে? এতে কী প্রতীয়মান হয়?



ঠিকানা: আপনি বলেছেন- সেনা প্রধান রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন- আপনি এবং আপনার পরিবার অনটাচড থাকবে। এই সময় আপনি কি সেখানে উপস্খিত ছিলেন এবং নিজ কানে শুনেছেন?

মোখলেস: আমি শুধু এই টুকু বলবো যে- যে দিন সেনা প্রধান, তিন বাহিনীর প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তার সামনে রাষ্ট্রপতিকে জরুরী অবস্খা জারি করতে বাধ্য করা হয় সেদিন সেনা প্রধান সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রপতিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন- স্যার, আপনি এবং আপনার ফ্যামিলি উইল বি আন টাচড। এটা তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন। সেই সময় আমি সেখানে ছিলাম কি ছিলাম না এই প্রশ্নের চেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এটা সেনা প্রধান বলেছিলেন এবং উপস্খিত সবাই জানেন।

ঠিকানা: আপনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন- রাষ্ট্রপতি এবং স্পীকারকে সরিয়ে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করে কাউকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে­ এই ’কাউকে’ কে?

মোখলেস: এটা আমার মনে হয় সবাই জানেন। ১/১১ এর পরের কার্যক্রমগুলো বিশেস্নষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। যখন যাকে দরকার তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন শেষে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তিন বাহিনীর প্রধানের মধ্যে দুই বাহিনীর প্রধানকে ব্যবহার করা হয়েছে। সে বাহিনীর একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা (যিনি ভূমিকা না রাখলে ১/১১ হতো না) তাকেও ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। সেনা বহিনীর একটি অংশের (গোয়েন্দা) ভারপ্রাপ্ত প্রধান যিনি ছিলেন তাকেও সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একে একে সবাইকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে- এখন সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি ও স্পীকারকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা চলছে। সেটা কে করছেন তা তো সবাই দেখছেন।



ঠিকানা: অনেকেই আপনাকে হাওয়া ভবনের লোক মনে করেন- আসলেই আপনি কি হাওয়া ভবনের লোক?

মোখলেস: একটা মিথ্যা কথা যদি একশত বার বলা হয়- তাহলে তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে যায়। যারা আমাকে হাওয়া ভবনের লোক বানিয়েছিলেন তারাই হচ্ছেন হাওয়া ভবনের লোক। অবাক বিস্ময়ে আমি তাকিয়ে দেখলাম- যারা হাওয়া ভবনে নিয়োজিত ছিলেন, যারা হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তাদের কারণে আমি হাওয়া ভবনে যাইনি। হারিস চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবার, এহসানুল হক মিলন, সর্দার শাখাওয়াত হোসেন বকুল, আরো কিছু মন্ত্রী, এমপি- হাওয়া ভবনের লোক ছিলেন। আমি যখন দৈনিক দিনকালে ছিলাম (অন্য কাগজেও কাজ করেছি) তখন এই সব লোক তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে আমাকেসহ তিন জন সিনিয়র সাংবাদিককে বের করে দেয়ার উদ্যোগ নেন এবং এক পর্যায়ে সেখান থেকে আমাকে চলে আসতে হয়। এরপর যখন আমাকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়, সেই দিনও এই সব লোকজন তারেক রহমানকে দিয়ে তৎকালীর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আমার বিরুদ্ধে বলানো হয়েছিলো। এর থেকে প্রমাণিত হয়- কারা হাওয়া ভবনের লোক। তবে আমি এইটুকু বলতে পারি- আমি কখনো হাওয়া ভবনের লোক ছিলাম না এবং রাজনৈতিভাবে হয়তবা বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের মত আমারও কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার দুর্বলতা থাকতে পারে। তবে দায়িত্ব পালনের সময় আমি সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেছি কি না- সেই প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আপনারা জানেন- যখন হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন কারা ছিলেন, রাজনীতি করেছেন এবং পরবর্তীতে বৈঈমানী করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাসহ সকল দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আমার একটা সুস্পর্ক আছে। তাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। আমার যদি কোন রাজনৈতিক মতবাদ থেকেও থাকে- আমি আমার কাজের মধ্যে তা আনিনি। রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সময় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে. ২০০১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ যখন রাষ্ট্রপতি তখন বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিধান অনুযায়ী যে কোন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে বিএনপিই মনোনয়ন দিয়েছে এবং তিনি সেইভাবেই রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ কাকে তার প্রেস সচিব নিয়োগ করবেন- এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তিনিই সেদিন আমাকে তার প্রেস সচিব ও উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু সেনা প্রধান জেনারেল ম ইউ আহমেদ তখন লে: জেনারেল ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর এবং পরবর্তীতে পিকেএসএফ (পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের এমপির দায়িত্ব পালন করেন)। ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জাতিসংঘে স্খায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। ড. ইফতেখার এবং ফখরুদ্দিনকে দফায় দফায় চুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক সিদ্ধাìত নিয়ে বিএনপির লোক মনে করে তাদের সেই সব পদে বসিয়ে ছিলেন। সেনা প্রধান ১০ জন সিনিয়র অফিসারকে ডিঙ্গিয়ে প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আনুকুল্যগ্রহণ করে সেনা প্রধান হয়েছিলেন। আমি এখন আর দায়িত্বে নেই, বাংলাদেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছে কারা বৈধ কারা অবৈধ, কারা সাংবিধানিক, কারা অসাংবিধানিক। কারা দেশ এবং জাতির জন্য জীবনের বিনিময়ে কাজ করেছেন, কারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন আর কারা আজকে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চাচ্ছেন। কারা বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর ভর দিয়ে রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করতে এসেছেন।



ঠিকানা: বাংলাদেশে প্রায়শই দেখা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানোর জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে দেয়া। সর্বশেষ বিএনপিও এ কাজটি করেছে- এ বিষয়ে আপনার মìতব্য কী?

মোখলেস: এটাকে দুইভাবে দেখা যায়। বিচারপতি কে এম হাসান এবং বিচারপতি সৈয়দ জি আর মোদাচ্ছের হোসেনকে আওয়ামী লীগের আমলে সুপারসিড করে অন্য বিচারপতিদের বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বানানো হয়েছিলো। পরবর্তীতে বিষয়টিকে প্রতিকারের জন্য এবং যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়নের জন্য বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছিলো বলে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জানিয়েছিলেন। তাছাড়া এই প্রþতাবটা তো বিএনপির ছিলো না। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন বিচারপতিদের বয়স তিন বছর বাড়ানোর জন্য। সরকার সেটাকে গ্রহণ করে বিচারপতিদের বয়স দুই বছর বাড়িয়েছিলেন। সেটা কী বিএনপি নির্বাচনে পার হওয়ার জন্য বা কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য করেছিলো কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে যে কথাটি বলতে পারি সেটা হচ্ছে- বিচারপতি কে এম হাসান সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার জন্য অপেক্ষমান ছিলেন। আওয়ামী লীগ যদি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে মেনে নিতেন তাহলে তাদের জন্য ভাল হতো রাজনৈতিকভাবে এবং দেশের সাংবিধানিক ধারা অক্ষুন্ন থাকতো। আমি মনে করি বিচারপতি কে এম হাসানের কাছ থেকে আওয়ামী লীগ বেশি সুযোগ নিতে পারতো এবং তাকে চাপে রাখতে পারতো। অন্যদিকে বিচারপতি এম এ আজিজ সিইসি ছিলেন। বিচারপতি আজিজের কী দোষ ছিলো? কয়েকজন সাংবাদিক এবং সম্পাদক তার বিরুদ্ধে ইচ্ছা মত লিখে যাচ্ছিলেন। এর কারণ ছিলো তিনি যখন সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন তখন সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। এই ক্ষোভে- দু:খে সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন।



ঠিকানা: ১/১১ এর পূর্ব পরিস্খিতি কি পরিকল্পিত বা কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এবং এর নেপথ্যে কারা ছিলো?

মোখলেস: বাংলাদেশে যখন বিএনপি সরকারের শেষ দিকে যে অরাজগতা বা ধ্বংসতক কার্যকলাপ শুরু করা হয়েছিলো- বর্তমান কার্যক্রম দেখার পরতো বলতে হয় না এর নেপথ্যে কারা ছিলো। এটা তো এখন পরিষ্কার। সেইদিন লগি-বৈঠা করার পিছনে ইন্ধন দেয়া হয়েছিলো। ঐ সময় সরকারের দায়িত্ব ছিলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জমান বাবর এবং পুলিশের আইজি ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল। তারা কেন সেদিন সেখান থেকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন? কেন সেদিন জামাতের মিটিং এ আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করেছিলো, মানুষ মেরে লাশের উপর নৃত্য পরিবেশন করা হয়েছিলো? যে ভিডিও বা সিডি দেখিয়ে বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের নেপথ্য শক্তি এখান থেকে ফায়দা লুটেছেন। সেদিন কার ইঙ্গিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশের আইজি সেখান থেকে পুলিশ সরিয়ে নিয়েছেন তার তদìত হওয়া প্রয়োজন। তবে ১/১১ এর ঘটনা ঘটানোর প্লট অনেক আগে থেকেই করা হয়েছে এবং এটা পূর্ব পরিকল্পিত।

ঠিকানা: এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারা প্রত্যেকেই বিএনপির বেনিফেশিয়ারি। তারা এই কাজটি কেন করেছেন?

মোখলেস: আমিতো আগেই বলেছি ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে- এটা হলো বেঈমানীর ইতিহাস, বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। তাদের যারা নিয়োগ দিয়েছিলেন তাদের সাথেই বেঈমানী করেছেন, চোখ উল্টিয়ে দিয়েছেন। ঘরে থেকেই মূল কেটে দিয়েছেন। ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী তারেক রহমানকে (যার কোন সরকারি বা রাষ্ট্রীয় পদ ছিলো না) ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক পর্যìত দুই দফায় তাকে কীভাবে সংবধনা দিয়েছিলেন, সারাক্ষণ পাশে পাশে ছিলেন, এয়ারপোর্টসহ বিভিন্ন জায়গায় ছুটে গিয়েছিলেন। তাকে তো রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তিনি তারেক রহমানকে খুশি করার জন্য এ কাজটি করেছিলেন। ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ, ড. ইফতেখার আহমেদ, বর্তমান সেনা প্রধান ম ইউ আহমেদ সরাসরি বিএনপি সরকার কর্তৃক বেনিফিশিয়ারি। এখন প্রশ্ন হলো কেউ যদি তার নিয়োগকারীর সাথে বৈঈমানী করে তাহলেতো কারো কিছু বলার নেই। বিএনপির ক্ষমতার শেষ সময়ে কানাডার হ্যালিফ্যাক্সে একটি সম্মেলন হয়েছিলো। সেই সম্মেলনে গিয়ে ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী লোকজনকে বলেছিলেন- আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর বাংলাদেশে বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে একটি সরকার গঠন করতে হবে এবং যথাস্খানে এই খবরগুলো গিয়েছিলো কিন্তু তারা কেন এ্যাকশন নেননি সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে এটুকু বলতে পারি তারা ক্ষমতার লোভে দেশ, জনগণ, রাজনৈতিক দল, সংবিধান, গণতন্ত্রের সাথে বেঈমানী করেছেন। ইতিহাস একদিন এই সব বেঈমানদের যোগ্য আসনে বসাবে। আপনারা জানেন নবাব সিরাজউদ্দৌলাহর সাথে মীর জাফররা কীভাবে বেঈমানী করেছিলো। ঘষেটি বেগম, রায় দুর্লভ, উমি চাঁদের কথা সবাই জানেন।



ঠিকানা: আপনাকে অনেকেই মনে করেন বিএনপির সমর্থক সাংবাদিক এবং আপনি যখন বঙ্গভবনে ছিলেন তখন অনেকেই মনে করতেন আপনি হাওয়া ভবন, জামাত এবং বিএনপির পারপাস সার্ভ করেছেন- আপনার মìতব্য কী?

মোখলেস: আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে পরোয়া করি না। আমি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করি। বিবেকের কাছে জবাব দিহি করি। আমি এখনো বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রথামিক সদস্য হয়নি। তবে আমি রাজনৈতিক সচেতন। দেশের অন্য লোকের মত আমি ভোট দিই। কেউ যদি বলেন আমি কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ঠ সাংবাদিক তাহলে এটা হবে তাদের মন গড়া একটি কথা। আমি দিনকালে কাজ করতাম। অন্য পত্রিকাতেও কাজ করেছি। বিএনপির পত্রিকা দৈনিক দিনকালে আওয়ামী লীগের লোকজনও সাংবাদিকতা করছেন, আবার দৈনিক জনকক্ত আওয়ামী লীগের পত্রিকা, সেই পত্রিকায় বিএনপির লোকজন সাংবাদিকতা করছেন। আমি একজন মুসলমান। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি- সেই হিসাবে আমাকে যদি জামাতের সাথে যুক্ত করা হয় তাহলে কিছু বলার নেই। তবে একটা কথা বলবো- বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর মত বিচারপতিরা গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে রায় দিয়েছিলেন- তারা কি জামাতের লোক হয়ে গিয়েছেন? এমন কি বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। তাহলে শেখ হাসিনা কি জামাতকে প্রার্থী দিয়েছিলেন? বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকেও শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। তাহলে শেখ হাসিনা কি জামাতের লোককে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন? আমি রাজনীতি করি তবে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নই।

ঠিকানা: বাংলাদেশে বার বার সেনা বাহিনী গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানছে। আপনি কি মনে করেন এই ধরনের সেনা বাহিনী বাংলাদেশে থাকা উচিত?

সোখলেস: একটি স্বাধীন- সার্বভৌম দেশের জন্য সেনা বাহিনী থাকবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার করার জন্য। দেশের সীমাìেত তারা অতন্দ্রপ্রহরীর মত দায়িত্ব পালন করবে। ১৯৭১ সালেও মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সেনা বাহিনী জনগণের নেতৃত্বে কাজ করেছে। সেনা বাহিনী থাকবে- জনগণের নেতৃত্বে কাজ করবে, দায়িত্ব পালন করবে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে দেখা যায় তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে দায়িত্ব পালন করে। সেনা বাহিনী রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার কি পরিণতি হয়- আমরা কি পাকিþতানের দিকে তাকিয়ে দেখতে পারি না। আমার মনে হয় সেনা বাহিনীর লোকজন মনে করে না কারো খায়েশ পূরনের জন্য সেনা বাহিনীর বদনাম হোক। সেনা বাহিনীতে অনেক দেশপ্রেমিক লোকজন আছেন। তারা তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে জানেন। সেনা বাহিনীর লোকজন এও জানেন ইউনিফর্ম পরে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া যায় না এবং প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সর্বাধিনায়ক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আছেন তার পারমিশন ছাড়া মুখও পর্যìত খোলা যায় না। একজন সিভিল সার্ভেন্ট হয়ত দুই একটা কথা বলতে পারেন কিন্তু মিলিটারী সার্ভেন্ট সেই কথাও বলতে পারেন না। বাংলাদেশে সেনা বহিনীকে ভাল একটি পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা প্রত্যেকের অবদান রয়েছে। এই সেনা বাহিনীকে তারা হৃষ্টপুষ্ট করেছে এ জন্য নয় যে- এই সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে কারো অবৈধ খায়েস মেটানোর জন্য, কোন একক ব্যক্তির জন্য, সেনা বাহিনী ব্যবহৃত হয়ে জনগণের উপর ছোবল দেবে। সেনা বাহিনী রাখার দরকার আছে কী না- এই প্রশ্ন আজ অনেকেই করছেন। আমি মনে করি সেনা বাহিনীর সদস্যরা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে তাদের কাজ করতে হবে, তত তাড়াতাড়ি তাদের মঙ্গল হবে। তানাহলে সেনা বাহিনীর ক্ষতি হবে, সেনা বাহিনীর ক্ষতি হলে দেশের ক্ষতি হবে এবং জাতির ক্ষতি হবে। আজ ১৮ মাস পর্যìত সেনা বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আছে, এটা শুভ লক্ষণ নয়। ভারতকে আমরা কারণে অকারণে গালাগাল করি কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারত থেকেও শিক্ষনীয় অনেক কিছু আছে। জনগণের সঙ্গে যদি সেনা বাহিনীকে মিক্সড করা হয় তাহলে সেনা বাহিনীর ক্ষতি হবে। আজ এক ব্যক্তির অবৈধ খায়েস মেটানোর জন্য সেনা বাহিনীর অনেক অফিসারকে বিভিন্ন কারণে বিভিন্নভাবে অর্থনীতি সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং মনে করা হচ্ছে তাদেরকে এই প্রক্রিয়ায় জড়িত করার মধ্য দিয়ে তারা আনন্দ পাবে, মজা পাবে এবং যার ফলশ্রম্নতিতে যে নেত্রী তার খায়েস মেটাতে চান তিনি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারবেন। আমার মনে হয় সময় এসেছে সেনা ও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের চিìতা করার, গণতন্ত্রের মধ্যেই তাদের মঙ্গল নিহিত আছে।

ঠিকানা: সেনা বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্খা বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের কাজ হলো দেশে কী ঘটছে সরকারকে জানানো, সরকারকে প্রটেক্ট করা কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় এরাও ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে যুক্ত থাকেন- এর কারণ কী?

মোখলেস: সেনা বাহিনীর একটি গোয়েন্দা সংস্খা আছে। এর কাজ সেনা বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত জনগণের মধ্যে তাদের দায়িত্বে নিয়োজিত না করে সিভিল যে গোয়েন্দা সংস্খা রয়েছে তাকে শক্তিশালী করা উচিত এবং প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে তাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। আর সেনা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্খা সব সময় সঠিক তথ্য দেয় না। তারা বলেছিলো ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে, ১৯৯৬ সালে তাদের তথ্য ছিলো বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, ২০০১ সালে তাদের তথ্য ছিলো আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসবে। মাঝে মধ্যে তারা কিছু ভাল তথ্যও দেয়। দুই দলকে নির্বাচনে আনার জন্য আমি রাষ্ট্রপতির দূত হিসাবে যখন বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনার সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করছি সেটা সেনা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্খা ভাল চোখে দেখেনি। আমার কাজগুলো তাদের পছন্দ হচ্ছিলো না। দু’দলের কাছে তারা দু’ধরনের কথা বলছিলেন। সেই জন্য বলা হয়েছিলো আমি নাকি একটার পর একটা সমস্যা সৃষ্টি করছি। তারা সমস্যার সৃষ্টি করছেন, আর আমরা ভাঙ্গার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। উল্টোভাবে আমার উপরই দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হলো। এতেই বুঝা যায় সেই সময় তারা কী দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নিয়ম হচ্ছে- গোয়েন্দা সংস্খাকে রাখা হয়- সেনা প্রধানসহ যারা ক্ষমতালিঞ্ঝু তাদের চেক দেয়ার জন্য। ১৯৯৬ সালে জেনারেল নাসিম যখন অভুথান ঘটান সে দিন ডিজেএফআই চেক দিয়েছিলো এবং নবম পদাধিক ডিভিশন তাদের সমর্থন জানিয়েছিলো। কিন্তু ২০০৭ সালে দেখা গেল সবাই এক হয়ে গিয়েছেন। যে গোয়েন্দা সংস্খা রাষ্ট্রের ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষ প্রশ্ন করে এই গোয়েন্দা সংস্খা রাখার দরকার আছে কী না। কেউ যদি নিজের ক্ষতি নিজে করতে চায় তাহলে আপনি কী করে তার উপকার করবেন?

ঠিকানা: আপনি বলেছিলেন দুই নেত্রীর মধ্যে খুব সুক্ষ্মভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। এই জিনিসটা কি দুই নেত্রী বুঝতেন না?

মোখলেস: বাংলাদেশে রাজনীতির কৃষ্টি এবং কালচারের অভাব। একটি দল পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে, এর পর নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অমুক কে মানি না, তমুক কে মানি না, নির্বাচন হলে নির্বাচনের ফলাফল মানি না, সুক্ষ্মকারচুরি হয়েছে, স্খূল কারচুপি হয়েছে- এটা যেন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে আন্দোলন। দুই নেত্রীর মধ্যে যে সুক্ষুভাবে ষড়যন্ত্র করে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছিলো- এটা তাদের বুঝা এবং উপলব্ধি করা উচিত ছিলো। তাদের ধারণা ছিলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারি এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশে আর সামরিক শাসন হবে না। তারা চেয়েছিলেন সেনা ও সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করবেন। কিন্তু তাদের বুঝা উচিত ছিলো সশস্ত্র বাহিনীর সব সময় সব আমলে সবাই এক রকম হন না। বাংলাদেশের ইতিহাসে যেভাবে জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গনির অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। লে: জেনারেল নূরুদ্দিন খান যেভাবে গণতন্ত্রের জন্য ভূমিকা রেখেছিলেন- উনাদের মত সব জেনারেল এক রকম হবেন না। সেই দিন দুই নেত্রীকে আমরা বলেছিলাম এ সব কথা। খালোদা জিয়া বিশ্বাস করতে চাননি, আর শেখ হাসিনা জানতেন ১২ জানুয়ারির মধ্যে দেশে মার্শাল ল’ জারি হবে। তারা যদি বলতেন তাহলে আমরা ব্যবস্খা নিতে পারতাম।

ঠিকানা: প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করার জন্য পিজিআর রয়েছেন। তারা কি সেদিন প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করতে পারতেন না?

মোখলেস: পিজিআর বা প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্ট যারা তারাও সেনা বাহিনী থেকে এসেছেন। সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়েই পিজিআর গঠিত। সব সময়ই দেখা গেছে পিজিআর প্রেসিডেন্টকে রক্ষার জন্য সব সময়ই দাঁড়িয়েছিলেন এবারো তারা দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে- তিন বাহিনীর প্রধান, নবম ডিভিশনের প্রধান, ডিজিএফআইসহ ভিতরে বাইরে সবাই এক হয়ে গেলে পিজিআর- এর আর কিইবা করার ছিলো। পিজিআরতো সেই দিন বঙ্গভবনের গেইটে তিন বাহিনীর প্রধানকে আটকিয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেনা বাহিনীর কর্মকর্তারা যখন হþতক্ষেপ করেন তখন পিজিআর- এর কিছুই করার ছিলো না।

ঠিকানা: বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে যে সেনা প্রধান দুই দিন পর পর রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করছেন- এর কারণটা কী?

মোখলেস: সেনা প্রধান প্রয়োজনবোধে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে পারেন। ঘন ঘন যে সাক্ষাৎ করা হচ্ছে- তার লক্ষ্য হচ্ছে মিডিয়াতে আসা। তিনিই এখন যা বলছেন তা হচ্ছে বাংলাদেশে এবং তার কথাতেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু দু:খজনক ব্যাপার হচ্ছে- তিনিই সব কিছু করছেন কিন্তু বলতে পারছেন না- এই মনের কষ্ট তিনিই বুঝতে পারছেন আর যারা তাকে জানেন চিনেন তারা বুঝেন। ১/১১ এ তিনিই সব কিছু করেছেন। তার কারণেই আমাকে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দিয়ে আসতে হয়েছে। সেনা বাহিনীর দুই জন জেনারেল মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন এবং মেজর জেনারেল আকবর আক্তারকে তিনি চাকরি থেকে বরখাþত করেছেন। মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে চেক করেছেন। প্রেসিডেন্টকে তিনি ব্যবহার করছেন। নিয়ম হচ্ছে প্রেসিডেন্ট তাকে ব্যবহার করবেন। প্রেসিডেন্টকে দিয়ে নিজের স্বার্থে ১ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। সেই ফাইলে লেখানো হয়েছে জনস্বার্থে তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একজন ব্যক্তি অপরিহার্য্য হতে পারেন না। কিন্তু আমাদের সেনা প্রধান নিজের কাজ করছেন জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তিনি সংবিধান লংঘন করছেন। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সর্বাধিনায়ক, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। তার অর্ডারে চলবে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি- যাকে তিনি অর্ডার দিবেন তিনি উল্টো তাকে দিয়ে অর্ডার বাþতবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন। এগুলো এখন গোপন কিছু নয়। আমিতো সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমি রাষ্ট্রপতির পক্ষে ডিসিশন নিতে পারতাম, সেনা বাহিনীর প্রধান সম্পর্কে আমি ডিসিশন দিতে পারতাম উপদেষ্টা হিসাবে­ রাষ্ট্রপতিকে বলে বা পরামর্শ দিয়ে। কিন্তু আমি সেটা করিনি। রাষ্ট্রপতিতো এখন অসহায়। তাকে পুতুলের মত ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু লোক দুর্নীতি করেছে তাদের বিচার হবে। কিন্তু রাষ্ট্রকে থামিয়ে দিয়ে, সংবিধানকে থামিয়ে দিয়ে, রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা অগ্রগতিকে থামিয়ে দিয়ে, গণতন্ত্রকে ব্যাহত করে যদি দুর্নীতি রোধ করতে হয় তাহলেতো দেশ একবারেই থেমে যাবে। আপনিতো দেশকে থামাতে পারেন না, সংবিধানের উপর হাত রাখতে পারে না। সংবিধানে হাত দেয়া এবং সংবিধান না মানা, লংঘন করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। এটার শাþিত হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। সশস্ত্র বাহিনীর কোন লোক যদি এর সাথে জড়িত হয় তাহলে তার কোর্ট মার্শাল হবার কথা। দুর্নীতি করলে জেল হয়, আর সংবিধান লংঘন করলে তার বিচার হচ্ছে ফাঁসি। সংবিধান লংঘন করতে হবে কেন? গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, দুর্নীতির বিচার হবে কি হবে না,- এটা কি সামরিক বাহিনীর কোন কর্মকর্তার বিষয়?

ঠিকানা: আপনি কি মনে করে যারা সংবিধান লংঘন করেছেন, বাংলাদেশে তাদের বিচার হবে?

মোখলেস: সেটাতো ভবিষ্যত বলে দিবে।

ঠিকানা: আপনি বার বার এক ব্যক্তি এক ব্যক্তি বলেছেন। এই এক ব্যক্তিটা কে?

মোখলেস: এই ব্যক্তিটা কে তা নিশ্চিয় আমার বক্তব্যের মধ্যে উঠে এসেছে। এক ব্যক্তি হচ্ছেন বর্তমান সেনা প্রধান ম ইউ আহমেদ। তিনি এই কাজগুলো করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন প্রেসিডেন্ট হবার জন্য এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার জন্য। খন্দকার মোþতাক আহমেদ যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন লেফটেন্যান্ট ম ইউ আহমেদ মোþতাক সাহেবের সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করেছিলেন বেশ কয়েক দিন বঙ্গভবনে। তার সহকর্মীরা বলেন, ম ইউ আহমেদ নাকি দুর্নীতির মাধ্যমে সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তার যে উচ্চতা সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন একজন সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা হবার উচ্চতা তার নেই। কিন্তু কীভাবে তিনি সেনা বাহিনীতে ঢুকলেন? অনেকেই বলেন, তিনি প্রথম দিনই ঢুকেছিলেন দুর্নীতির মাধ্যমে এবং তার সম্পর্কে মাহমুদুর রহমান বলেছেন-তার বড় ভাই ইকবাল ইউ আহমেদ ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি। সেনা প্রধানের ভাইতো এই রকম পোস্টে থাকতে পারেন না বিধি অনুযায়ী। এ ব্যাংক থেকে তিনি বা তার আতীয়- স্বজন কত টাকা নিয়েছেন, দেশে বিদেশে কী করছেন, কোন ব্যবসায়ী এজেন্টের সাথে রয়েছেন- এইগুলো সবাই জানেন। তিনি কত লোন নিয়েছেন এবং ফেরত দিয়েছেন, কোথায় থেকে এসেছে- এ সবই পত্র পত্রিকায় এসেছে। এখন নিজে দুর্নীতিবাজ হয়ে জাতিকে দুর্নীতি মুক্ত করবেন এমন কথা যদি কেউ মনে করেন- তাহলে এটুকু বলতে চাই­ আগে নিজে সৎ হন তারপর অন্যকে সৎ হতে বলুন। এখন তারা ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন সীমা লংঘন করো না, আমি সীমা লংঘনকারীদের বরদাþত করি না। কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত সীমা লংঘন করছেন। যাদের যে কাজ তারা সেই কাজ করছেন না।

তিনি ওয়ান ইলেভেন সম্পর্কে আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ১/১১ ইজ নাথিং বাট ওয়ান ইউস টু বি দা প্রেসিডেন্ট এন্ড আদার ইলেভেন আর বিং ইউজড ফর দিস পারপাস।

খবরের লিংক

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia