কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

হুজি এবার ‘আইডিপি’ নামে প্রকাশ্য রাজনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি−আইডিপি’ নামে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী−হুজি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করল সাবেক আফগান মুজাহিদদের এই সংগঠন আইডিপি।
অবশ্য সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেছেন, “তাঁদের সংগঠন এ দেশে ১৯৯২ সালেই আত্মপ্রকাশ করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ নামে। এরপর ১৯৯৮ সালে তা বিলুপ্তি ঘোষণার পর ‘ইসলামী গণ-আন্দোলন’ নামে সংগঠন করেছিলাম। সেই সংগঠন থেকে এখন আইডিপি নামে কাজ করছি।”
গতকাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মাওলানা শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আইডিপির ইফতার ও আলোচনা সভায় সংগঠনের নেতারা ছাড়াও সংগঠনের ভাষায় ‘আন্তসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের স্বার্থে আমন্ত্রিত’ ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিৎজ-এর সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশ-এর সহকারী সম্পাদক ও হিউম্যান রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের পি কে বড়ুয়া, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি চিত্ত ফ্রান্সিস রিভেরু বক্তব্য দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেন, আইডিপির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন রাজনীতির জন্ন হলো। তিনি বলেন, আইডিপির সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের নাম জড়িত। এটা এমন একটি সংগঠন, যার সম্পর্কে নানা আলোচনা রয়েছে। আইডিপিকে যারা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে, ওই সব পত্রিকা বিদেশের টাকায় চলে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ এবং বালিতে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সত্ত্বেও হিযবুত তাহ্রীরের মতো সংগঠন যদি এ দেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে, তাহলে আইডিপি কেন পারবে না। যারা বাংলাদেশকে করদ রাজ্য বানাতে চায়, তারা আইডিপিকে হুমকি মনে করে।
সঞ্জীব চৌধুরী বলেন, ‘আফগানফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের মূলধারার সদস্যরা আইডিপি গঠন করেছে। পরিচয়সুত্রে আমি এদের সঙ্গে অনেক কাজ একত্রে করেছি। এ নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। আমরা এই অনুষ্ঠান আরও আগে করতাম, কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনুমতি পেতে দেরি হয়েছে। তাতে একদিকে ভালোই হলো। আজ পবিত্র জুমাতুল বিদার দিন আইডিপির প্রথম প্রকাশ্য মাহফিল হচ্ছে।’
আইডিপির উপদেষ্টা ও খেলাফত আন্দোলনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক কাজী আজীজুল হক বলেন, তথ্য ও যোগাযোগের ঘাটতির কারণে আইডিপি সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। হরকাতুল জিহাদ বিলুপ্ত করার পর প্রথমে ইসলামী দাওয়াতি কাফেলা, তারপর ইসলামী গণ-আন্দোলন এবং এখন আইডিপি নামে সংগঠন হয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এটা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইডিপির সদস্যসচিব মাওলানা রুহুল আমিন, তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কারি হোসাইন আহমদ, মাওলানা আবুল কাশেম রহমানী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং মাওলানা মুফতি কামাল, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মুফতি ফজলে এলাহি, মাওলানা মুফতি নোমান, খেলাফত মজলিসের (ইসহাক) নায়েবে আমির এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির ছফর উল্লাহ খান, জৈনপুরী পীর মাওলানা এহছানুল্লাহ আব্বাসী প্রমুখ। এ ছাড়া মরহুম হাফেজ্জী হুজুরের মেজ ছেলে হাফেজ মাওলানা হামিদুল্লাহ ও মাওলানা আতাউল্লাহ উপস্িথত ছিলেন। ইফতার অনুষ্ঠানে সংগঠনের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্িথত ছিল।
সমাপনী বক্তৃতায় মাওলানা আবদুস সালাম নিজেদের আন্তর্জাতিক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, তাঁরা মদিনা সনদের আলোকে একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চান।
আশির দশকে আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ কমান্ডার আবদুস সালাম এর আগে গত ১৭ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, সংগঠনের মজলিশে শুরার সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে আহ্বায়ক করে গত ১৮ মে আইডিপির ১৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপসহ নানা কারণে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নাম পাল্টালেও এর নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, মজলিশে শুুরা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া প্রায় একই ছিল। ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে প্রথম গোপন এই সংগঠনটি ইসলামী গণ-আন্দোলন নামে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে। এই লক্ষ্যে ওই বছরের ১৮ আগস্ট জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সচেতন ইসলামী জনতার ব্যানারে বড় একটি সমাবেশ করেছিল। তখন সচেতন ইসলামী জনতার আহ্বায়ক হিসেবে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের। এই তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে। আবু তাহের হুজির ঢাকা মহানগর সভাপতি ও মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর হুজিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০২ সালের ২১ মে বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইস এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের হুজিকে একটি ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এবং একটি ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে ঘোষণা দেন।
গতকাল ইফতার অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে মাওলানা সালাম বলেন, ‘কয়েকটি কারণে আমরা হরকাতুল জিহাদ বিলুপ্ত করি। এর মধ্যে মূলত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু কারণ ছিল। আপনারা জানেন, আমরা যারা হরকাতুল জিহাদ করি, সবাই আফগান মুজাহিদ ছিলাম। সেখানে মুজাহিদদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়ে। তা ছাড়া যে জিহাদি জজবা নিয়ে, আফগানিস্তানে আমরা গিয়েছিলাম, বিশেষ করে সোভিয়েত দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের সাহায্য করা ও মানবিকতা পুনরুদ্ধারের জন্য, সেই কাজ হয়ে গেছে। এখন আর সেই নামটি (হরকাতুল জিহাদ) ধরে রাখার কোনো কারণ নেই।’
হুজির সঙ্গে জড়িত মুফতি হান্নানসহ অনেকের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আছে−এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ সালেই মুফতি হান্নানকে আমরা দল থেকে বহিষ্ককার করি। বহিষ্ককারের পর কেউ যদি ওই নামে নাশকতা করে থাকে, তার দায়দায়িত্ব তাদেরই। আমাদের ওপর বর্তায় না। তবে সরকারকে ধন্যবাদ, তাদের ধরেছে। এখন তাদের বিচার চলছে।’

প্রথম আলো, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia