কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

২৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে র‌্যাংগস

নজরুল ইসলাম
রাজধানীতে বিজয় সরণি-তেজগাঁও সংযোগ সড়কের মুখ আগলে গড়ে ওঠা ২২ তলা র‌্যাংগস ভবনের বৈধ অংশ ও এর অধিগ্রহণ করা জায়গার জন্য র‌্যাংগস কর্তৃপক্ষকে ২৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ−রাজউক। এর মধ্যে অধিগ্রহণ করা ২১ কাঠা জমির দাম নয় কোটি এবং বৈধ ছয় তলার জন্য ১৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়। প্রতি কাঠা জমির জন্য র‌্যাংগসকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪ টাকা।
রাজউকের পরিচালক (ভুমি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, দলিলে উল্লিখিত জমির দামের সঙ্গে ৫০ শতাংশ টাকা যোগ করে ক্ষতিপূরণের জন্য জমির বর্তমান মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে একই পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণ করা হলেও র‌্যাংগস ভবনের পেছনের জমির মালিকেরা কাঠাপ্রতি পেয়েছেন ১২ লাখ টাকা করে।
পুরো ২২ তলা ভবনটি চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙার প্রতিষ্ঠান সিক্স স্টার করপোরেশনের কাছে রাজউক বিক্রি করেছে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। ভবনের ভাঙা ইট-সুরকি আর রড বিক্রি করে এই টাকা তুলে লাভ করতে পারবে বলে আশা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী শাহ আলম প্রথম আলোকে জানান, সিক্স স্টার ইতিমধ্যে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকাও শিগগিরই পাওয়া যাবে। তিনি জানান, র‌্যাংগস ভবনের মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে ২৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণের ২৫ কোটি টাকা র‌্যাংগস কর্তৃপক্ষ এখনো গ্রহণ করেনি।
গত বৃহস্পতিবার ভবনটি মাঝখান দিয়ে ভেঙে চারতলা বরাবর নামিয়ে আনা হয়েছে। ভবনটির দুই দিকের এখন কেবল লিফট বসানোর অবকাঠামো কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। গতকাল চার তলায় কলামের সংযোগ দেয়াল গ্যাসচালিত কাটার দিয়ে ভাঙা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার ভেঙে দেওয়া কলামগুলো নিচে নামিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ৮০ ফুট উচ্চতার এই ভবন সম্পুর্ণ সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
রাজউক সুত্র জানায়, ২২ তলা ভবনটির ছয় তলা পর্যন্ত বৈধ ছিল। বাকি ১৬ তলা অবৈধ। রাজধানীর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশে সরকারের সব কটি কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে ১৯ বছর ধরে গড়ে ওঠে ভবনটি। এই ভবনের কারণে বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পও আটকে ছিল এত বছর। কিন্তু যাদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে এ অবৈধ ভবন গড়ে উঠেছিল, তাদের চিহ্নিত করারই কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর গত বছর এ ভবনটির ১৬ তলা অবৈধ আখ্যা দিয়ে ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করে রাজউক। এ কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ১১ জন গরিব শ্রমিক এবং আরেকজন র‌্যাংগস ভবনের নিরাপত্তা কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এঁদের প্রত্যেকের পরিবারকে রাজউক ইতিপূর্বে এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
বিজয় সরণি-তেজগাঁও সংযোগ সড়কের প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে র‌্যাংগস ভবন ভেঙে মাটির সমতলে নামিয়ে আনা হবে। সিক্স স্টার করপোরেশনের প্রকৌশলী বি এম ফয়েজউদ্দিন বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ভবন ভাঙার কাজ শেষ করা সম্ভব।
রাজউকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা একই প্রতিষ্ঠানের সদস্য (পরিকল্পনা) গোলাম কিবরিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, বুয়েটের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে ভবনটি ভাঙা হচ্ছে। এটি দ্রুত ভাঙতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভাঙার কাজ তত্ত্বাবধানকারী রাজউকের সহকারী প্রকৌশলী হারুন এ মজিদ প্রথম আলোকে জানান, বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের তদারকিতে প্রতিদিন দিনের পালায় চারজন ও রাতের পালায় রাজউকের দুজন প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ৮২ জন শ্রমিক ও ১৫ জন টেকনিশিয়ান কাজ করছে। তিনি জানান, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের ৮০ ফুট উচ্চতার লিফট বসানোর অবকাঠামোও ভেঙে চার তলার সমানে নামিয়ে আনা হবে। শুধু ঈদের দিন কাজ বন্ধ থাকবে।
সিক্স স্টার করপোরেশন ভবনের ভাঙা ইট-সুরকি বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিক্রি করছে। তারা এই ইট-সুরকি কিনে নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের নিচু জায়গা ভরাট করছে। প্রকৌশলী ফয়েজ দাবি করেন, প্রতিদিন শ্রমিকের পেছনে তাঁদের ৮২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তবে বাকি রড ও ইট-সুরকি বিক্রি করলে তাঁরা লাভের মুখ দেখবেন।
গত বছরের ১১ জানুয়ারি পটপরিবর্তনের পর দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর প্রথম থেকেই আলোচনায় আসে র‌্যাংগস ভবন। অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক হয়ে ওঠা ভবনটি নিয়ে আবার পত্রিকায় লেখালেখি শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের ২১ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সভায় র‌্যাংগস ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত ২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ফজলুল করিমের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ ভবনটির অবৈধভাবে নির্মিত ১৬ তলা ভাঙার নির্দেশ দেন। এরপর রাজউকের পক্ষ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
ভবনটি উচ্ছেদ শুরুর পর সরকার এখন তেজগাঁও-বিজয় সরণি সম্প্রসারিত সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia