ইত্তেফাকের সঙ্গে যৌথ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাগণ
।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। বিশ্বের যে ২২ টি দেশের মধ্যে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, বাংলাদেশ তার মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে সনাক্তকৃত সকলপ্রকার যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪২। তবে চিকিৎসা করলে ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ রোগীর যক্ষ্মা নির্মূল হয়। গতকাল শনিবার ‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমঃ নগর এলাকার যক্ষ্মা পরিস্থিতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, যক্ষ্মা রোগের ঝুঁকি কমাতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে দৈনিক ইত্তেফাক, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। এতে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক রাহাত খান। বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ ময়েজ, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শামসুল হক, এআইজিপি (প্রিজন) কর্ণেল আশরাফুল ইসলাম, ব্র্যাকের পরিচালক শীপা হাফিজা, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবদুল আউয়াল মিয়া, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বার্তা সম্পাদক রাশেদা আমিন, এপির ব্যুরো চিফ ফরিদ হোসেন, অভিনেত্রী কবরী সরোয়ার, নাট্যকার জিনাত হাকিম প্রমুখ। গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ডা. শায়লা ইসলাম।
রাহাত খান বলেন, বাংলাদেশের ৫০ ভাগ লোক যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত। এই হার গ্রামাঞ্চলে বেশি। উন্নয়নশীল দেশে যক্ষ্মার প্রকোপ ও মৃত্যুর হার বেশি। এক সময় প্রবাদ ছিল- যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা। এখন এইডস হলে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তখন যক্ষ্মা হলে সেই আতংক দেখা দিত। তিনি আরো বলেন, যক্ষ্মার সামাজিক প্রতিরোধ হচ্ছে না, প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যম ঘটনা ঘটলেই তা কভার করে। গণমাধ্যমকে যক্ষ্মা প্রতিরোধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হলে বিশেষ সমঝোতা হতে হবে।
ড. মোহাম্মদ ময়েজ বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের উদ্যোগের ফলে যক্ষ্মা প্রতিরোধে সাফল্য এসেছে। এখন শিল্পখাতের শ্রমিকদের নিয়ে ভাবতে হবে। এছাড়া পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমেও যক্ষ্মা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, যক্ষ্মা প্রতিরোধে কর্মসূচিগুলোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এছাড়া যক্ষ্মার জীবাণু আক্রান্ত সকলের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। ৪০ শতাংশ যক্ষ্মা জীবাণু আক্রান্ত বেসরকারি খাতের চিকিৎসাসেবা নেন।
অধ্যাপক ডা. শামসুল হক বলেন, রোগীর সংখ্যার দিক থেকে ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ, এটি আশংকাজনক। এটি কাঙিক্ষত পরিস্থিতি নয়। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের নজরদারি ব্যবস্থা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করতে হবে।
কর্ণেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে কারাগারগুলোতে ২৭ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতা রয়েছে, অথচ বর্তমানে ৮৩ হাজার বন্দী রয়েছেন। এসব কারাগারে ৬৮ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। বন্দীরা যেহেতু সমাজের নিম্নবিত্ত স্তরের, তাই তাদের মধ্যে যক্ষ্মা রোগের প্রবণতা বেশি। এজন্য কারাগারে যক্ষ্মা প্রতিরোধ কর্মসূচির ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে।
শীপা হাফিজা বলেন, গণমাধ্যমকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।
ডা. শায়লা ইসলাম উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, যক্ষ্মা কোন বংশগত রোগ নয়। ওষুধ খাওয়া শুরু করলে দুই সপ্তাহ পর এই রোগ আর ছড়ায় না। চিকিৎসা করালে এই রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়।
খবরের সূত্র:ইত্তেফাক ২১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮। লিংক
ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।