কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

প্রজনন মৌসুমে অন্যকে আকর্ষণে গোখরার এই জলকেলি

শাহেদ চৌধুরী

মুন্সীগঞ্জে খালের পানিতে সাপের যুগল নৃত্য নিয়ে দেশজুড়ে নানা গল্প-গুঞ্জন, কল্পকাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ সাপ দুটির নয়নাভিরাম নৃত্যশৈলীকে আধ্যাত্মিক শক্তিধর কিছু মনে করছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো কারো দৃষ্টিতে সাপের মুখোশ পরে দেবতার আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু প্রাণি-বিজ্ঞানীরা বলছেন ভিন্নকথা। তাদের মতে, ওই সাপ দুটো গোখরা প্রজাতির। প্রজনন মৌসুমে মিলনের আগ মুহূর্তে একে অন্যের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় ও মোহনীয় করে তুলতে পানিতে যুগল নৃত্য করছে। আবার বিরক্ত হলেও নাচানাচি করতে পারে সর্পযুগল।
গত ক’দিন ধরে মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পার্শ্ববর্তী চৌধুরীবাজার সংলগ্ন সুউচ্চ মঠের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সাতানিখিল খালের পরিষ্কার টলমলে পানিতে সর্পযুগলের নাচের অভূতপূর্ব দৃশ্য অনেকের চোখে পড়েছে। এ নিয়ে শনিবার সমকালে একটি সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর বর্তমানে রাজশাহী বিভাগীয় পশুসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মফিজুর রহমান বলেছেন, ওই সাপ দুটো গোখরা প্রজাতির। আর মিলনের ঠিক আগের মুহূর্তে সাপ দুটো নৃত্যশৈলীতে মত্ত হয়েছে। নৃত্যের মধ্য দিয়ে পরস্পরকে আরো কাছে পেতে চাইছে।
একমাত্র গোখরা সাপই ফণা তুলে পানিতে নাচতে পারে। সাধারণত এ প্রজাতির সাপের পক্ষেই শরীরের তিন ভাগের এক ভাগ পানির উপরিভাগে উঠিয়ে মনোমুগ্ধকর নৃত্য করা সম্ভব। ফণা তোলার কারণে সাপ ভারসাম্য রাখতে পারে। সেই সঙ্গে মুগ্ধ-বিমোহিত নাচের অভূতপূর্ব দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতেও তারা সক্ষম।
মুন্সীগঞ্জে খালের পানিতে নৃত্যরত সাপ ফণা তুলেনি। তবে গোখরা সাপের মতো শরীরের আঁশ বাদামি এবং কালো রংয়ে মিশ্রিত। বুকের অংশ সাদা। পেছনের দিক বাদামি। পাঁচ থেকে ছয় ফুট লম্বা। দ্র“ত গতির এ সাপ সাঁতারে পটু। একই সঙ্গে বিষধর। এ সাপের ছোবলে প্রাণহানির আশঙ্কাও আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই মাস গোখরা সাপের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে সঙ্গীর মনোরঞ্জন কিংবা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সাপ জলকেলিতে মেতে ওঠে। একেকটি সাপ বছরে একবার গড়পড়তা ৬০ থেকে ৭০টি ডিম দিয়ে থাকে।
গোখরা সাপ দু’প্রজাতির। পদ্ম ও খৈয়া। সাধারণত লোকালয়ের বাইরে খানিকটা শুকনো, খানিকটা ভেজা জায়গায় এদের আবাস। নদী কিংবা জলাধারের পাশে জঙ্গলে অথবা ইঁদুরের গর্তে এরা থাকে। টিকটিকি, ইঁদুর, পোকামাকড় ও পশুপাখির ডিম খায়। মাছে আগ্রহ নেই। গাছে উঠতে বেশ পারঙ্গম। সুন্দরবনে সংখ্যাধিক্য বেশি।
প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, সাপ নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনী থাকলেও মুন্সীগঞ্জ খালের নৃত্যরত সাপ নিয়ে বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ নেই। ওই সাপে আধ্যাত্মিক শক্তিধর কিছু নেই। সাপকে দুধকলা ভোগ দিয়েও লাভ নেই। কেননা সাপ কখনই দুধকলা খেতে পারে না।

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia