কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

bdnews24

ওরা ফিরছে এক কাপড়ে

ওরা ফিরছে এক কাপড়ে
সৌদি ও কুয়েত থেকে বহিস্কার
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ফেরত আসা শুরু হয়েছে বাংলাদেশি জনশক্তির। গত দু’দিনে সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে এক কাপড়ে ফিরে এসেছে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক। তারা সৌদি ও কুয়েতের পুলিশের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার। যারা ফিরে এসেছে তাদের অনেকেই আহত ও রক্তাক্ত। কুয়েত থেকে আরো ৮ শ’ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
গত দু’দিনে যারা ফিরেছেন তাদের অনেকেই কুয়েতি ও সৌদি পুলিশের নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তারা বৈধভাবে ওইসব দেশে গেলেও তাদের অভিযোগ সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাস তাদের রক্ষায় কিছুই করেনি। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ দাবি করেছেন ফেরত আসা শ্রমিকরা। বিদেশে নির্যাতন আর দুর্বিষহ অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিমানবন্দরে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। সহায়-সম্বল বিক্রি করে বিদেশে চাকরির জন্য গিয়ে তারা ফিরেছেন একেবারে খালি হাতে।
যারা ফিরে এসেছেন তাদের দেখে মনে হয়েছে কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এসেছেন তারা। তারা জানেন না কি তাদের অন্যায়। কুয়েতি পুলিশ তাদের ধরেই মারপিট করেছে, তারপর জেল এবং পরে জেল থেকে বের করে সোজা এয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছে। পথেও মারপিট। কোনো কিছুই সঙ্গে আনতে দেয়নি কুয়েতি পুলিশ। সবকিছুই কেড়ে রেখে দিয়েছে। একই অবস্থা সৌদি আরবেও। সেখানেও শ্রমিকদের ধরে সোজা জেলে ও পরে এয়ারপোর্টে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সৌদি পুলিশের অত্যাচার। সবকিছুই সেখানে ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
কুয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক শেখ জাবের দাইজ সাবাহ বলেছেন, কুয়েতের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু বাংলাদেশি শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কুয়েতে বাংলাদেশ দহৃতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কাজী একেএম মহিউল ইসলাম মানবিক দিক বিবেচনা করে আটক করা বাংলাদেশিদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভিবাসন শাখা সূত্র জানায়, গতকাল সকালে ইয়েমেন এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ১১৮ জন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। তিনি জানান, এসব বাংলাদেশির বৈধ পাসপোর্ট ছিল না। সে কারণে সৌদি সরকার তাদের ফেরত পাঠিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, ‘প্রায় ৮ শ’ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। কুয়েত সরকার তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।’
কুয়েতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কুনার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েত সরকার শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে ৪০ দিনার করার চিন্তা করছে। যারা এই বেতন দেবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্টিøতে বলা হয়েছে, কুয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক শেখ জাবের দাইজ সাবাহ গতকাল কুয়েতে বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বলেছেন, কুয়েতি কেবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভিডিও ক্লিপিংস এবং গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী সহিংসতায় মদদদাতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের চিহিক্রত করে কুয়েতের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কোনো নিরপরাধ শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হবে না।
তিনি জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি তাদের কোনো বৈষম্যমূলক নীতি নেই। সহিংসতা এড়াতে কুয়েতি আইন-শৃগ্ধখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে নিরপরাধ ৩০০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শেখ জাবের বলেন, যেসব কোম্পানি শ্রমিকদের ৪০ দিনার বেতন প্রদান করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব কোম্পানি নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হবে তাদের নিয়োজিত শ্রমিকদের অন্য কোম্পানিতে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
কুয়েতি কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ এবং বর্ধিত বেতন বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান কুয়েতে বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স। তিনি নিরপরাধ বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ারও জোর অনুরোধ করেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সব আটক লোকদের ছেড়ে দেওয়ারও বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মাসিক ৫০ দিনারের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলেও মাত্র ২০ দিনার করে বেতন পাচ্ছিলেন বিক্ষোভে নামা শ্রমিকরা। এ ২০ দিনার থেকে ভিসার নাম করে আরো ১২ দিনার কেটে রাখা হতো। কর্তৃপক্ষ এর পাশাপাশি শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করত। সঙ্গত কারণেই ফুঁসে ওঠে শ্রমিকরা।

সমকাল, ৩১ জুলাই ২০০৮

BBC Asia-Pacific

CNN.com - Asia